কাতারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না সৌদি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কাতারের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। ৮ সেপ্টেম্বর কাতারের আমির ও সৌদি যুবরাজের মধ্যে হওয়া ফোনালাপের পর রিয়াদের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।
এ-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মধ্যে ফোনালাপের ঘটনা উপসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যমান সংকট নিরসনের আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়েছে। কাতারের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন চার দেশের অবরোধ আরোপের পর কেটে গেছে তিন মাস। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। একাধিকবার আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও সৌদি আরবসহ অবরোধকারী দেশগুলোর দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। অবশেষে ৮ সেপ্টেম্বর সংকট শুরুর পর প্রথমবারের মতো সৌদি যুবরাজ ও কাতারের আমিরের মধ্যে ফোনালাপ হয়। এতে দুই নেতাই আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন বলে দোহা ও রিয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে প্রোটোকল নিয়ে। কাতার নিউজ এজেন্সির খবরে ফোনকলটি যে দোহা থেকে করা হয়েছিল, তার উল্লেখ না থাকায় রুষ্ট হয়েছে রিয়াদ। আর এটিই মধ্যপ্রাচ্যের এ কূটনৈতিক সংকট নিরসনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাতার নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই নেতার মধ্যে হওয়া ফোনালাপটি সমন্বয় করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফোনালাপে শেখ তামিম ও মোহাম্মদ বিন সালমান দুজনই গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। উদ্ভূত সংকট নিরসনে দুজন দূত নিয়োগের বিষয়ে সৌদি যুবরাজের দেওয়া প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন কাতারের আমির। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কাতার নিউজ এজেন্সির এ সংবাদ নিয়েই আপত্তি সৌদি আরবের। সৌদি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা এসপিএ প্রকাশিত এ-বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংকট নিরসনে আলোচনার প্রস্তাব ও ফোনকল দুইটিই এসেছে কাতারের দিক থেকে। আর এ ফোনকলে কাতারের আমির অবরোধকারী চার দেশের দেওয়া শর্তগুলো নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও মিসরের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এর কিছুক্ষণ পরই এসপিএ আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতার নিউজ এজেন্সিতে এ ফোনালাপ নিয়ে যে সংবাদ প্রচার হয়েছে তা অসত্য। কাতার সরকারের কাছ থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সঠিক তথ্য প্রচারের আগ পর্যন্ত কাতারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার পরিকল্পনা বাতিল করা হচ্ছে।
সংকট নিরসনে কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হয়েছিল হোয়াইট হাউসের মধ্যস্থতায়। ৮ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারের আমির ও সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। তিনি কাতার সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উভয় নেতার প্রতি আহ্বান জানান। একই বিষয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আরব নেতাদের সঙ্গে হওয়া এ ফোনালাপে আরবের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষত ইরানের দিক থেকে সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলার জন্য এ স্থিতিশীলতা খুবই প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে রিয়াদ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা রক্ষার বিষয়ে সবাইকে তৎপর হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন সফররত কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি সংকট নিরসনে কুয়েতের আমিরের মধ্যস্থতার চেষ্টাকে সমর্থন জানান। একই সঙ্গে এ বিষয়ে নিজেও মধ্যস্থতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের পর থেকেই তা প্রত্যাহারে মূল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখছেন কুয়েতের আমির। এরই অংশ হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর তিনি ওয়াশিংটনে যান এবং ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কুয়েতের আমির বলেন, ‘আমাদের মধ্যস্থতার কারণে অবরোধকারী দেশগুলো কাতারের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে।’ কুয়েতি আমিরের এই বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে সৌদি আরব ও এর মিত্র দেশগুলো।