বগুড়ায় থানা ঘেরাও ফাঁড়িতে আগুন, নিহত ৭

দেশব্যাপী বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা ৩ দিনের হরতালের প্রথম দিনেই উত্তাল হয়ে উঠেছে বগুড়া। রোববার ফজর নামাজের একটু আগে চাঁদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখার খবরে রাস্তায় নেমে পড়ে জামায়াত-শিবির ও সাঈদী সমর্থকরা। এ সময় কয়েকটি বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় সাঈদী সমর্থকদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে ৭ জন নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ নানাভাবে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শাজাহানপুর থানা রক্ষায় সেনা সদস্যরা এগিয়ে আগে ও বগুড়া জেলা প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম. নুরুল ইসলাম সকাল ৯ টার দিকে বাংলানিউজকে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলা সদরসহ রংপুর-বগুড়া ও ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের জেলা শিবগঞ্জ উপজেলাধীন মোকামতলা, মহাস্থান থেকে শুরু করে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে গাছের গুড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বাধা উপেক্ষা করার চেষ্টা করলে জামায়াত-শিবির ও সাঈদীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে।

এর পরপরই সংঘর্ষে জেলা সদরের সাবগ্রাম, নারুলী, জলেশ্বরীতলা ইয়াকুব স্কুল মোড়, দত্তবাড়ী, চকযাদু রোড, সেউজগাড়ী, সার্কিড হাউস রোডসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা পর্যায়ে। এ সময় জেলার দুপচাঁচিয়া থানা, শিবগঞ্জ থানা, শাজাহানপুর থানা ও মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ভাঙচুর করে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় আন্দোলনকারীরা। পায় একই সঙ্গে তারা বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ি, কৈগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি, নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ও উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করে ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

সংঘর্ষ ও ভাঙচুর চলাকালে আন্দোলনকারীরা বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে তারা।

এছাড়া বগুড়া রেলস্টেশন অফিস, ইয়াকুব স্কুল মোড়ে অবস্থিত এটিএন ইলেকট্রনিক্স, করতোয়া কুরিয়ার অফিস, সাতমাথাস্থ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিস, দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান খান সেলিমসহ আওয়ামী লীগ দলীয় বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবির ও সাঈদী সমর্থকরা। প্রায় একইভাবে জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েকটি অফিস ও কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে হরতালকারীরা। এ সময় উপজেলা শহরের পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সে সময় পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

সংঘর্ষ চলাকালে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম বাংলানিউজকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জেলায় ৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও বিভিন্ন ভাবে ১১ জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে শাজাহানপুর উপজেলায় নারীসহ ৫ জন, শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলায় ৩ জন এবং বগুড়া শহরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জনের লাশ মাঝিড়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, ৩ জনের শিবগঞ্জ থানায়, ১ জনের লাশ বগুড়া সদর থানায় এবং ২ জনের লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল (শজিমেক) হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, শিবিরের প্রচার বিভাগ থেকেও বেলা পৌনে ১২ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ১১ জনের মধ্যে তাদের সমর্থকসহ সাধারণ জনতাও রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন সকাল ১০ টার দিকে বাংলানিউজকে জানান, তিনি তার বাসভবনে সকাল থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। হরতালকারীদের চাপের মুখে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারেন নি।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ দুপুর ১২ টা ২২ মিনিটে বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় সেনা মোতায়েনের বিষয়টি সরকারি কোন সিদ্ধান্ত নয়, বা অন্যকোন সিদ্ধান্তও নয়। তারা (সেনা সদস্যরা) পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশপ্রেমিক হিসেবে কেবল পাশ্ববর্তী শাজাহানপুর থানা রক্ষায় এগিয়ে এসেছে মাত্র।

তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন এর পাশাপাশি শহরে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।

দুপুর ১ টা পর্যন্ত বগুড়া সদর থানাসহ পুলিশের একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, পরিস্থিতি এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে এ বিষয়ে তারা সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
মার্চ ০৩, ২০১৩

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ