চাল নিয়ে তর্কে জড়ালেন মন্ত্রী-ব্যবসায়ীরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ জন্য তাঁরা সরকারের কাছে চাল আমদানি ও পরিবহনে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছেন। সেই সঙ্গে স্থলবন্দর দিয়ে চালবাহী ট্রাকগুলো যাতে দ্রুত আসতে পারে, সে ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের তরফ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান অর্থ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশের চালকল মালিকদের সংগঠনগুলোর নেতারা ও খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করেন—এমন কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দেশে চালের কোনো সংকট নেই এবং সারা দেশে প্রায় এক কোটি টন চাল আছে—এ মন্তব্য করে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে উল্টো সরকারের নানা নীতির সমস্যা ও সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশে এক কোটি টন চাল মজুত আছে জানিয়ে অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা মোটা চাল মেশিন দিয়ে কেটে মিনিকেট বানান। ব্যবসায়ীরা তাঁর এ বক্তব্যেরও প্রতিবাদ করেন। চালকল মালিক চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘আপনার মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রীর কাছে আমরা এ ধরনের মন্তব্য আশা করি না। কোথায় এক কোটি টন চাল মজুত আছে, আমাদের দেখান।’ এরপর ব্যবসায়ীরা একে একে চালের দাম বাড়ার কারণগুলো তুলে ধরেন।
দিনাজপুরের জহুর অটো রাইস মিলের মালিক আবদুল হান্নান নিজেকে সরকারদলীয় সমর্থক পরিচয় দিয়ে বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমাতে গিয়ে অনেক সময় নেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে কমানো হয়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে।
চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘সরকার ভারত থেকে বেশি দামে চাল আমদানি করছে। কিন্তু আমাদের যদি দায়িত্ব দিত, তাহলে আমরা সরকারের চেয়ে কম দামে ভারত থেকে চাল এনে দিতে পারতাম।’
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি যখন খাদ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন ভারত থেকে চাল আমদানি করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। মাত্র পাঁচ লাখ টন চাল আনার চুক্তি করেও কোনো চাল আনতে পারিনি। পরে ভিয়েতনাম থেকে চাল এনে সংকট মোকাবিলা করেছি।’
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের চালের দাম কমানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সরকার নিজেও আমদানি করে মজুত বাড়াচ্ছে। আগামীকাল থেকে ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আগামীকাল থেকে সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ওএমএস (খোলা বাজারে চাল বিক্রি) কর্মসূচি চালু করছি।’
চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমে যাবে।