জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নতুন প্রকল্প নিচ্ছে ইসি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আগামী ডিসেম্বরের পর আর অর্থায়ন করবে না। কাজ শেষ না হলেও প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে।
ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এই অবস্থায় সরকারি অর্থায়নে ১ জানুয়ারি থেকে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে ইসি। গতকাল মঙ্গলবার নতুন প্রকল্পটি কমিশনের বৈঠকে উত্থাপিত হলে তা গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছিল, আইডিইএ প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দেওয়া হবে। কিন্তু গত জুন পর্যন্ত স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন মাত্র ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোটার (২ লাখ ৫৭ হাজার)।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম নতুন প্রকল্পের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ১৮ সেপ্টেম্বর ইসিকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আইডিইএ প্রকল্পের অধীনে ১০ কোটির বেশি ভোটারের তথ্যভান্ডার রক্ষণাবেক্ষণ, তথ্য হালনাগাদ, পরিমার্জন, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে সহায়তা করছে। ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে ২৫ লাখ নতুন ভোটারের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলছে। হালনাগাদ সম্পন্ন করে ভোটারদের বায়োমেট্রিক যাচাই, কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত ভোটারদের অ্যাডজুডিকেশন সম্পন্ন করা, খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংশোধন ও চূড়ান্ত করার কাজ আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। আইডিইএ প্রকল্পের দক্ষ জনবল চলে গেলে শুধু ইসির জনবল দিয়ে হালনাগাদের কাজ শেষ করে ভোটার তালিকা করাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হবে। এতে ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন বাধাগ্রস্ত হবে বলে প্রতীয়মান হয়। নতুন প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’। এ প্রকল্পে বিভিন্ন শ্রেণির মোট ২ হাজার ২৪টি পদ এবং ১০ জন পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের কেনাকাটার জন্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বলেন, আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কমিশন একটি নতুন প্রকল্প নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্প ও বাজেট নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করে নতুন প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে। ইসির সূত্র বলেছে, নতুন এই প্রকল্পের অধীনে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনযোগ্য নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ, স্মার্ট কার্ড দেওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ও তথ্য হালনাগাদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই-সংক্রান্ত সব সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২০১১ সালে ইসির আইডিইএ প্রকল্পের চুক্তি হয়। তবে কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। পরে বিশ্বব্যাংক এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ায়।
এই প্রকল্পের অধীনে স্মার্ট কার্ডের জন্য ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড পারসোনালাইজেশন করে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু গত জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পর্যায়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ (১২ দশমিক ২০ শতাংশ) কার্ড পৌঁছাতে পেরেছে। আর ওই সময় পর্যন্ত কার্ড পেয়েছেন মাত্র ২ লাখ ৫৭ হাজার ভোটার।