সেই কার্লোস জামিনে বেরিয়ে গেছেন
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সেই নারী এখনো উঠে দাঁড়াতেই পারছেন না। হাত-পাগুলো এখনো ঠিক হয়নি। অথচ এর মধ্যেই তাঁকে সাততলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া গৃহকর্তা সালেহ আহমেদ ওরফে কার্লোস জামিনে বেরিয়ে গেছেন। পুলিশ বলছে, ঘটনার শিকার নারীর পরিবারকে টাকার ফাঁদে ফেলে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সালেহ। আর সেই নারীর পরিবার জানিয়েছে, তাঁর চিকিৎসা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাঁরা আপস করে গৃহকর্তার জামিন পেতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু জামিন পাওয়ার পর আসামিপক্ষ হাসপাতালের বিল দিচ্ছে না।
গত ৩০ জুন রাতে রাজধানীর পরীবাগের দিগন্ত অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের সাততলায় নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ওই নারী গৃহকর্মীকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সালেহ। এতে ওই গৃহকর্মীর হাত-পা ও বুকের পাঁজর ভেঙে যায়। কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত লাগে। এরপর ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনার পর ১ জুলাই পুলিশ সালেহকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। পরে দিগন্ত কমপ্লেক্সের গ্যারেজ থেকে জাতীয় সংসদের মনোগ্রাম খচিত সালেহ আহমেদের একটি গাড়িও জব্দ করে র্যাব।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে ২০১৪ সালেও সালেহকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তাঁর কাছ থেকে ইয়াবা, জাতীয় সংসদের মনোগ্রাম খচিত নম্বরপ্লেটহীন মার্সিডিজ গাড়ি, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। সেবারও কিছুদিনের মধ্যে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। সরকারের সাংসদ ও মন্ত্রীর ছেলেদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত ওঠাবসা বলে তখন র্যাব জানিয়েছিল।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান গতকাল বলেন, সালেহর জামিনের কথা তিনি শুনেছেন।
শাহবাগ থানার সূত্র জানায়, আহত গৃহকর্মীর পরিবারটি গরিব। তাদের টাকার লোভের ফাঁদে ফেলে সালেহ গত ১৮ আগস্ট এক মাসের জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন।
এদিকে ঘটনার শিকার গৃহকর্মীর মা গতকাল বলেন, ‘তাঁরা খরচ না দিলে তো মেয়ের চিকিৎসা হবে না। আর এখনো সে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। বাকি জীবন কী করে বাঁচবে আল্লাই জানেন। ওর দুই ছেলেমেয়ে আছে। তাদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে। তারা (আসামিপক্ষ) আমাদের বলছে, আমরা আদালতে কিছু না বললে তারা চিকিৎসার সব খরচ দেবে। কিন্তু এখন হাসপাতালে কয়েক লাখ টাকা বিল বকেয়া হয়ে থাকলেও তারা পরিশোধ করছে না।’
ওই নারীর মা বলেন, ‘ওরা বারবার শুধু বলে একদিন না একদিন তো উনি (সালেহ) জামিনে বের হবেন। তখন আমাদের তারা দেখে নেবে। আমরা আমাদের মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তা করে তাদের কথা শুনলাম। জামিন পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কত মিষ্টি মিষ্টি কথা। ১৮ আগস্ট আদালত এক মাসের জামিন দিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই তারা যেন উধাও হয়ে গেল। গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আবার শুনানি ছিল। তার আগে ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে এসেছিলেন সালেহ নিজেই। আবার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছেন, যাতে আমরা শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা না করি। আমরা কথা রেখেছি। কিন্তু তাঁরা কোনো কথা রাখছেন না। হাসপাতালে কয়েক লাখ টাকার বিল বাকি পড়ে আছে।’
ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা জানান, আসামিপক্ষের আশ্বাসে ২৪ জুলাই ঢাকা মেডিকেল থেকে পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ওই নারীকে। প্রথম দিকে মাঝেমধ্যে সালেহর লোক এসে ১০-২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। সেসব দিয়ে তাঁর দুই দফায় হাতে-পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু এখনো তিনি উঠে দাঁড়াতেই পারেন না। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে পুরো পরিবার।