দুই প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বলে দাবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রহস্যময়ী এই নারীর পর্দার আড়ালে নাকি অনেক ক্ষমতা। দাবি করেছেন, ক্ষমতাধর দুটি দেশের প্রভাবশালী দুই প্রেসিডেন্টের স্ত্রী তিনি। পয়সাকড়ির অভাব নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার দাবিও করেন তিনি। বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই নারীর মুখোমুখি হতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
মার্কিন দৈনিকের হাতে থাকা অসংখ্য অভিযোগের প্রমাণ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে কথা বলবেন বললেও শেষমেশ তা আর হয়নি। তবে মঙ্গলবার এই নারীকে নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মাদাম জিজেল ইয়াজ্জি বলে তিনি পরিচিত। তাঁর আরও অনেক নাম রয়েছে। এসব নাম তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই বাড়ি ও সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও মেরিল্যান্ডেও আছে আলিশান বাড়ি। ৫০ বছর বয়সী এক নারীর দাবি করেছেন, তিনি দুটি দেশের দুই বিখ্যাত প্রেসিডেন্টের স্ত্রী! কিন্তু তাঁদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে গোপনে। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রেসিডেন্ট স্বামীদের ইচ্ছায় তিনি বিয়ের তথ্য চাপা রেখেছেন।
জিজেল ইয়াজ্জির দাবি, মিসরের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তাঁর স্বামী! তবে এ খবর আর কেউ জানেন না। তাঁর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিসির ফোনালাপ করিয়ে দিয়েছেন তিনিই। ট্রাম্পের সঙ্গে সিসির সুসম্পর্কের কারণও নাকি তিনি!
জিজেল দৃঢ় গলায় দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ তাঁর স্বামী ছিলেন! কিন্তু এর কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নাকি তাঁর হাত রয়েছে। ঘানার সাবেক প্রেসিডেন্ট জন কুফুয়োরের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। এ নিয়ে ঘানার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ব্লগে লেখালেখি হয়েছিল।
তবে হুগো চাভেজ ও সিসির সঙ্গে কবে তাঁর বিয়ে হয়েছে, তা জিজেল জানাননি।
জিজেল দাবি করেন, তাঁর জন্ম লেবাননে। তিনি বেড়ে উঠেছেন বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবায় তাঁর অবাধ চলাচল। কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র দিতে চেয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাতিল হয়।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে চটকদার এক দাবি করেছেন জেজেল। তাঁর দাবি, ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ইভানকার কাছে নাকি তাঁর মর্যাদা অনেকটা মায়ের মতোই। শুধু তা-ই নয়, হোয়াইট হাউসে তাঁর বসারও ব্যবস্থা আছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, জিজেল নামে হোয়াইট হাউসে কেউ কাজ করেন না। জিজেলের অর্থ-সম্পদ নিয়ে তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
জিজেলের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অ্যাটর্নির কার্যালয়। ব্যক্তিগত জেট বিমানে চলাচল করা এই নারীর তথ্যগুলো কতটা সঠিক, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
কে এই মাদাম জিজেল
তাঁর বাড়ির নম্বর ৭১৩-ওয়াশিংটন ছাড়িয়ে মেরিল্যান্ডের চেভি চেজের অভিজাত বহুতল ভবনে। ওটাই জিজেলের ঠিকানা! ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীকে টি-শার্ট বিক্রির বুদ্ধি দুই ব্যক্তিকেই বাতলে দিয়েছিলেন জিজেল! এ থেকে হাতিয়ে নেন কাড়ি কাড়ি ডলার। বব আন্ডারউড আর সাদি, দুই পড়শি পরস্পরকে চিনতেনও না। মাদাম জিজেলের (এই নামে ডাকতেন তাকে) সূত্রেই জানতে পারেন, কী ভাবে প্রতারিত হয়েছেন তারা।
পরিবারের কাছেও জিজেল এক আতঙ্কের নাম। সন্তানেরা তার থেকে দূরে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
মেরিল্যান্ডের ওই ভবনে কখনো লবি, কখনো লিফটে ‘রূপের’ ছটায় জিজেল আলাপ জমাতেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। ৫৩ বছরের ববের ৭ বছরের কন্যার সঙ্গে ভাব জমিয়ে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে মাদাম জিজেল ঢুকে পড়েন আন্ডারউড পরিবারে। ববকে বলেছিলেন, জন্ম লেবাননে। ঘুরেছেন সারা বিশ্ব। মাসে আয় রোজগার ২১ লাখ ডলার! সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকতে তার কষ্ট হয়। ববের মেয়েকে তাই তার এত পছন্দ!
হুগো চাভেজের সঙ্গে বিয়ের গল্পটা শুনেছিলেন বব-ই। অসুস্থ চাভেজের সঙ্গে কী ভাবে জিজেল কিউবায় যান, সেখানকার চিকিৎসকেরা কী বললেন, সেই গল্পও তিনি বলেন। তার বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকে তাঁকে বিশ্বাস করতেন। বিবাহবিচ্ছেদের পরে সংসারে টানাটানি চলছিল ববের। টি শার্ট বিক্রি করে লাভের গল্প তখনই সামনে এল। ২০১৫-র শেষ দিকে রাজি হলেন বব। দিনে দিনে পুঁজির চাহিদা তুঙ্গে উঠল। গুনে গেঁথে বব দেখছেন, ৫০ হাজার ডলারেরও বেশি বেরিয়ে গেছে তার। এরপর এ বছর জুনে বব দেখা পান সাদি’র। বৃত্ত পূর্ণ হয় তখনই।
সাদিও স্বপ্ন দেখতেন, বড় বাড়ি, পিএইচডি ডিগ্রির। টি-শার্ট বেচার গল্প শুনে বিনা কাগজে পাঁচ হাজার ডলার জিজেলকে দেন। পরে সাদি গুগলে জানতে পারেন, মাদাম জিজেল আসলে কে। কলম্বিয়ায় বেশ পরিচিত একটা নাম জিজেল। ওখানেই প্রতারণায় হাত পাকে মাদামের। কারাবাসও হয়েছিল। আদালতের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসেন। কলম্বিয়ায় আর ফেরেননি। সে দেশ তাকে চেনে ‘বিখ্যাত ফেরারি’ হিসেবে।
সূত্র: জি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্ট।