দুই জিদানের লড়াই
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এনজো জিদান রিয়াল মাদ্রিদের যুব প্রকল্পে নাম লেখান ২০০৪ সালে। জিনেদিন জিদান তখনো মাঠে মানে, খেলে চলছেন। ১০ বছর পর যুব প্রকল্প থেকে রিয়ালের ‘বি’ দলে উঠে আসেন এনজো। জিদান তখন সেই দলের কোচ। অর্থাৎ, কিংবদন্তি বাবার সরাসরি কোচিং-সান্নিধ্যে ছেলে। তখন কে ভেবেছিল, জিদানকে একদিন তাঁর ছেলের মুখোমুখি হতে হবে!
কল্পনাপ্রেমী ফুটবল ‘রোমান্টিক’রা ভেবেছিলেন, রিয়ালের ডাগ-আউটে থাকবেন জিদান, মাঠে খেলবে তাঁর ছেলে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এভাবেই একদিন গড়ে উঠবে ‘জিদান-সাম্রাজ্য!’ মানে, এনজোর পর লুকা, থিও আর এলিয়াজ—জিদানের চার ছেলেই মাঠ দাপিয়ে বেড়াবেন, রিয়ালের জার্সি গায়ে। চারজনই যে বার্নাব্যুর যুব প্রকল্পে বেড়ে উঠেছেন।
এনজোকে নিয়েই স্বপ্নটা বেশি দেখা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে কোপা ডেল রের ম্যাচে রিয়ালের হয়ে অভিষেকেই গোল করেন। বাবার মতোই মিডফিল্ডার এনজোকে ঘিরে তখন থেকেই স্বপ্ন দেখেছে রিয়াল সমর্থকেরা। কিন্তু ফরাসি কিংবদন্তি নিজেই তাঁদের সেই স্বপ্নের অকালমৃত্যু ঘটান গত জুনে আলাভেসের কাছে এনজোকে বিক্রি করে। এতেই মাঠের লড়াইয়ে বাবা-ছেলের মুখোমুখি হওয়ার পথটা খুলে যায়।
সেই লড়াইটা দেখা যাবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। স্প্যানিশ লা লিগায় আজ রাত বাংলাদেশ সময় ৮টা ১৫ মিনিটে আলাভেসের মাঠে নামছে রিয়াল। এ ম্যাচে পেশাদার ফুটবলে প্রথমবারের মতো ছেলে এনজোর মুখোমুখি হচ্ছেন রিয়াল কোচ জিদান। ডাগ আউটে দাঁড়ানো কিংবদন্তি বাবার ‘কৌশল’ বানচাল করে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এনজোকে। এ নিয়ে ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার কিন্তু বেশ রোমাঞ্চিত, ‘বেশ অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। আবার আমার জন্য এটা বিশেষ ম্যাচও। বাবা আমার কাছে সব সময়ই উদাহরণ। সব সময় তাঁকে অনুসরণের চেষ্টা করি।’
মাঠের লড়াইয়ে বাবা আর বাবা থাকবেন না। ছেলে হয়ে যাবেন শত্রু। বাবা হয়তো ছেলেকে ঘায়েল করার সব উপায়ই বলে দেবেন রিয়াল ডিফেন্ডারদের। ছেলের দুর্বল জায়গাগুলোর সন্ধান দেবেন অবলীলায়। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটাই ফুটবল। এটাই খেলাটার পেশাদারি।
জিদান তো অকপটেই বলেছেন আজ আলাভেসের বিপক্ষে ছেলে এনজো তাঁর কাছে প্রতিপক্ষ বই আর কিছুই নন,‘আশা করি সে যেন গোল করতে না পারে। সবার আগে আমাদের নিজেদের ভালোটা দেখতে হবে। জানি না ওঁর মুখোমুখি হওয়া অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা হবে কি না। আমি এসব নিয়ে এত ভাবিনি। আলাভেসের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচ-এটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
লা লিগা টেবিলে শীর্ষস্থানীয় বার্সেলোনার সঙ্গে ৭ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে রিয়াল। মাত্র ৫ ম্যাচ শেষে এ পয়েন্ট ব্যবধান কিন্তু লা লিগার গত ১০ মৌসুম বিচারে যথেষ্ট বড়ই। কেননা, সর্বশেষ ১০ মৌসুমে ছয়বারই টেবিলে দ্বিতীয় সেরা দলের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ পয়েন্ট ব্যবধানে শিরোপা জিতেছে চ্যাম্পিয়ন দল। সেখানে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এখনই ৭ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া মানে শিরোপাটা প্রায় হাতছাড়া হওয়া! যদিও এখনো দুটি ‘এল ক্ল্যাসিকো’ বাকি আছে। কিন্তু জিদান যে চাপে আছেন, সে কথা বলে দেওয়াই যায়।
আলাভেসের বিপক্ষে চাপটা আরও বেশি। একদিকে আবেগ চেপে ছেলের মুখোমুখি হওয়ার হ্যাপা, অন্যদিকে ইনজুরি জর্জরিত স্কোয়াড থেকে সেরা একাদশ গঠনের চ্যালেঞ্জ। চোটের কারণে মার্সেলো, টনি ক্রুস, মাতেও কোভাচিচ ও করিম বেনজেমাকে এ ম্যাচে পাচ্ছেন না জিদান। তবে এ ম্যাচে বড় ছেলের বিপক্ষে লড়াইয়ে জিদানের পাশে আছেন তাঁরই মেজ ছেলে লুকা জিদানকে। আলাভেসের বিপক্ষে তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেকে লুকাকে স্কোয়াডে রেখেছেন জিদান।