রসগোল্লার আরেক শিকার গণি মিয়া
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় পোষা হাতির পায়ের চাপে প্রাণ হারিয়েছেন গণি মিয়া (৪৫) নামের এক মাহুত। আজ শনিবার সকালে উপজেলার মেরিনা চা-বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গণি মিয়ার বাড়ি উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মনছড়া গ্রামে।
হামলাকারী পোষা ওই পুরুষ হাতিটির নাম ‘রসগোল্লা’। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর একই হাতির আক্রমণে পাশের জুড়ী উপজেলার পুটিছড়া এলাকায় মঙ্গল খাড়িয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। হাতিটির মালিক জুড়ীর পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রসগোল্লাসহ আরও কয়েকটি পোষা হাতি জুড়ী ও কুলাউড়ার সংরক্ষিত বন এলাকায় বিচরণ করে। গাছ টানার কাজে মালিকেরা এসব হাতি ব্যবহার করেন। সম্প্রতি সঙ্গিনীর (নারী হাতি) নেশায় রসগোল্লা উন্মত্ত (স্থানীয় ভাষায় ‘মোস্ত’) হয়ে ওঠে।
গণি মিয়ার ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী সাজু আহমদ (২০) বলেন, তাঁর বাবা আরেকটি পুরুষ হাতির মাহুত ছিলেন। সকালের দিকে রসগোল্লা মেরিনা বাগানের ৮ নম্বর সেকশনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গণি মিয়া লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা বলেন এবং বিভিন্ন কৌশলে হাতিটি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে হাতিটি উত্তেজিত হয়ে পা দিয়ে তাঁর বুকে চাপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই গণি মারা যান। এরপর হাতিটি পাশের গহিন বনে চলে যায়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুঠোফোনে কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খছরুল আলম বলেন, খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গণির লাশ উদ্ধার করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলা হবে।
বন বিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ আবুল কাশেম বলেন, ‘হাতি মোস্ত হয়ে গেলে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। প্রবল জৈবিক তাড়না থেকে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, ‘এই মৌসুমে হাতি এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত উত্তেজিত থাকে। এ অবস্থায় তার কাছাকাছি লোকজন ভেড়ালে স্বাভাবিকভাবেই সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখান থেকে দু-এক দিনের মধ্যে একটি উদ্ধারকারী দল কুলাউড়ায় আসবে। তারা হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেবে।’
হাতিটির মালিক মঈন উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশীদ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা আর হাতিটারে নিয়া পারছি না। মানুষের ক্ষতি করেই যাচ্ছে। বন বিভাগের ডিএফওকে (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) বলেছি, এ ব্যাপারে যেকোনো ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর একই হাতির (রসগোল্লা) আক্রমণে জুড়ী উপজেলার পুটিছড়া এলাকায় মঙ্গল খাড়িয়া মারা যান। এলাকাবাসী জানান, মঙ্গল খাড়িয়ার মৃত্যুর পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় কোনো মামলা না করার শর্তে হাতির মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁর পরিবারকে এক লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেন।