চলন্ত সিঁড়ির দায়িত্ব কার?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিমানবন্দর বাস স্টপেজে চলন্ত সিঁড়িযুক্ত (এসকেলেটর) পদচারী–সেতু আবার বন্ধ। তবে এবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নয়। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে জটিলতার কারণে সরবরাহকারীরা এটি বন্ধ রেখেছে। সেতুটি এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা।
বিমানবন্দর বাস স্টপেজে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্য বলেন, চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকায় নিচ দিয়ে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রাস্তায় মানুষের চাপ বাড়ছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা বলেন, চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকায় শুধু এক পাশ দিয়ে ওঠা–নামা করতে হয়। তাই ভোগান্তি এড়াতে সাধারণ মানুষ নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয়।
চলন্ত পদচারী–সেতুটির বয়স এক বছর পার হয়েছে। এর আগে যান্ত্রিক ত্রুটি, অব্যবস্থাপনার কারণে এটা একাধিকবার বন্ধ ছিল। গণমাধ্যমে লেখালেখির পর আবার চালু হয়েছে। এবার কোনো যান্ত্রিক সমস্যা নেই দাবি করে চলন্ত সেতুর অপারেটর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সিঁড়ি ঠিক আছে। আমাকে চালাইতে বললে এখনই চালু কইরা দিতে পারমু। কিন্তু চুক্তি নিয়া সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ঝামেলা চলছে। তাই চালানো হচ্ছে না।’
চলন্ত সিঁড়ি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি, সেতুটি এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বুঝে নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা নিচ্ছে না।
এই চলন্ত সিঁড়িযুক্ত পদচারী–সেতুটি ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট উদ্বোধন করেন মেয়র আনিসুল হক। চুক্তি অনুযায়ী, এক বছর পরে সেতুটির দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের বুঝে নেওয়ার কথা। চুক্তির মেয়াদ গত ১৬ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেতুটি পরিচালনার দায়ভার বুঝে নেয়নি করপোরেশন। ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে সেতুর দুই পাশের চলন্ত সিঁড়ি দুটি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সূত্র জানায়, দরপত্রের মাধ্যমে এই পদচারী–সেতু নির্মাণের কাজটি পায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক লিমিটেড। তারা কাজটি দিয়ে দেয় আটলান্টিক মেরিনকে। আটলান্টিক মেরিন চলন্ত সিঁড়ি আমদানির কাজ দেয় হরাইজেন্টাল টেকনোকে।
হরাইজেন্টাল টেকনোর সহকারী ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব বলেন, ‘চুক্তি ছিল এক বছর পর্যন্ত আমরা এসকেলেটরের সার্ভিসিং করে দেব। ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বহন করবে সিটি করপোরেশন। কিন্তু গত এক বছরে সার্ভিসিং থেকে ব্যবস্থাপনা—সবই আমাদের করতে হয়েছে।’
আহসান হাবীব বলেন, দুজন অপারেটরের বেতন ধরা হয়েছে মাসে ৩০ হাজার টাকা। এক বছরে তা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কোনো টাকা দেয়নি।
গত ১৬ আগস্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে আহসান হাবীব আরও বলেন, ‘মেয়াদ শেষের আগেই আমরা সিটি করপোরেশন, নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক লিমিটেড এবং আটলান্টিক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কোনো কর্তৃপক্ষই এর জবাব দেয়নি।’
এ অবস্থায় সেতু পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে হরাইজেন্টাল টেকনো সিঁড়ি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বার্ষিক ব্যয় উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। করপোরেশন সে বিষয়েও তাদের কিছু জানায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে আটলান্টিক মেরিনের মালিক নাসির উদ্দিন বলেন, চলন্ত সিঁড়িটি নির্মাণে ব্যয় হওয়া প্রায় পাঁচ কোটি টাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এখনো পরিশোধ করেনি। নির্মাণের পর এক বছরের ওয়ারেন্টি সময়ও শেষ। এখন এটি পরিচালনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
দুটি চলন্ত সিঁড়িই ভালো অবস্থানে আছে উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশন দায়িত্ব বুঝে নিলে যেকোনো সময় সিঁড়ি দুটি চালু করা সম্ভব হবে। তারা এটা চালানোর জন্য লোকবলও দিচ্ছে না, সিঁড়িও চালু করছে না।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো তথ্য দেননি। তাঁরা একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গত শনিবার আবার যোগাযোগ করলে নুরুজ্জামান মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান, তিনি দুই দিন ধরে অসুস্থ। পরদিন যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি আর ধরেননি।
পরে উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের বরাত দিয়ে বলেন, ‘সিঁড়িটির যেকোনো অংশের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে আছে। যন্ত্রাংশটি দেশের বাইরে থেকে আনাতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিংকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কী যন্ত্র বিকল হয়েছে, এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি জনসংযোগ কর্মকর্তা।