কী নির্মম নৃশংসতা !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চুরির অভিযোগে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গত সোমবার পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৬ বছর বয়সী সাগরকে। এ সময় অনেকে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখেন এবং মোবাইলে ভিডিও করেন। তাঁদেরই কেউ কেউ সেই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। নির্মম সেই ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আজ বুধবার প্রথম আলো ফেসবুক পেজে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে পোস্ট করা হয়। সেখানে প্রায় ১১ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এক হাজারের বেশি মন্তব্য পাওয়া যায় এবং প্রায় সাড়ে ৮০০ বার পোস্টটি শেয়ার করা হয়।
নিহত সাগরের লাশ গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ উদ্ধার করে। সাগর পরিত্যক্ত সামগ্রী কুড়িয়ে বিক্রি করত। চুরির অপবাদ দিয়ে সাগরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পোস্টের নিচে পাওয়া মন্তব্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রত্যেকেই সাগরের নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন। তাঁরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এ জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। ঘটনার সময় যাঁরা বাধা না দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কিংবা ছবি-ভিডিও করছিলেন, তাঁদের প্রতিও নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ পায় বিভিন্ন মন্তব্যে।
পাঠকেরা লিখেছেন, মানুষ কতটা বর্বর হলে একটি কিশোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, কতটা নির্মম হলে চোখের সামনে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলার দৃশ্য দেখতে পারে, সেটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। যে চুরির অভিযোগে ছেলেটিকে হত্যা করা হয়, তার সত্যতা এখনো মেলেনি। যদি সত্যি সত্যি ছেলেটি চুরি করেও থাকে, সেই চুরি যাওয়া জিনিসটার মূল্য কি ছেলেটার জীবনের মূল্যের চেয়েও বেশি? চুরির দায়ে কিশোর হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আল ইমরান, লতিফুর রহমান, শাহিনুর রহমান জুয়েল, বুলবুল আহমেদ, আনসার উদ্দিনসহ বেশ কিছু ফলোয়ারের মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ পায়। তাঁরা এসব ঘটনার কারণ হিসেবে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বহীনতা, বিবেকহীনতাকে ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাবকে দায়ী করেন।
বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ঘটনার জন্য শামীম আহমেদ ও আহমেদ রাহমান ধীরগতির তদন্ত ও বিচারব্যবস্থাকে দায়ী করেন। রাহুল মামুনের মতে, আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়া ও মানুষের সহনশীলতা কমে যাওয়া এসব ঘটনার কারণ। বিএম রহিম, আনোয়ার হোসেইন সরকার, বজলুর রাহমান, ইশাক এহসান নির্যাতনকারীর কঠিন শাস্তির দাবি করেন।
মাহফুজ পাটোয়ারি আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘একটা শিশুকে পর্যন্ত নির্মমভাবে মেরে ফেলতে যাদের বুক একবারও কাঁপেনি, তারা মানুষ নয়, তারা হায়েনা।’ তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন তাদের, যারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই নির্মম দৃশ্য দেখেছেন এবং ভিডিও করেছেন! উজ্জ্বল হোসেইন, ওমর ফারুক, লুৎফর রহমানের মন্তব্যগুলোও অনেকটা এ রকম।
মেহজাবিন হিরা প্রশ্ন তুলেছেন, ঘটনাস্থলে থাকা মানুষেরা পুলিশকে কেন জানালেন না। তাহলে হয়তো ছেলেটা প্রাণে বেঁচে যেত।
মহিউদ্দিন লিখেছেন, ‘কতটা বর্বর হলে এভাবে হত্যা করা যায়।’
আবু জাফর শিশির জানতে চান, ‘এত অল্প অপরাধের অভিযোগের এত বড় শাস্তি কেন?’
শওগত আশরাফ নামের এক ফলোয়ার বেশ কিছু প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রস্তাব ছিল, একটি ইমার্জেন্সি হেল্পলাইনের ব্যবস্থা করতে হবে, যার মাধ্যমে যে কেউ এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারে।
মোহাম্মদ জিহাদ আহমেদ লেখেন, ‘সামান্য একটু চুরির দায়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে! কেউ কিছু বলল না! আরও মোবাইলে ভিডিও করছে। যারা এই ১৬ বছর বয়সের কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করছে, তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।’
আনসার উদ্দিন লেখেন, ‘মানুষ দিন দিন পশুতে রূপান্তরিত হচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধ যায় যায় অবস্থা। কী নির্মম, নৃশংস!’
অন্তরা অন্তু ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘বাহ বাহ “সন্দেহের” কারণে একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। আর যখন তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে, তখন জনগণ মাইর কাকে বলে ভুলে যায়।’
প্রদীপ দেবনাথ লেখেন, ‘একটি নির্মম ঘটনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা কতটা যৌক্তিক…তারা কি সত্যিই মানুষ ছিল…’
মোহাব্বত আলীর মতে, ‘শিশু নির্যাতন বিষয়ে গণমাধ্যম সোচ্চার থাকলে এর বিচার নিশ্চিত হবে।’
সানজিদা হাবিব লেখেন, ‘প্রত্যক্ষকারী যখন কিছু করে না, তখন খুব খারাপ লাগে।’ মোহাম্মদ আহমেদ এ ব্যাপারে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়ানোর প্রতি জোর দেন।