রোগী সেজে ছিনতাই !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বোরকা পরা তিন থেকে চারজন নারী হাসপাতালে এসে প্রথমে সেবা পেতে টিকিট কাটেন। হাতে টিকিট থাকলেও তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যান না। একপর্যায়ে কৌশলে একজন নারী রোগীর সঙ্গে ভাব জমান তাঁরা। পরে আড়ালে নিয়ে টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার কেড়ে নিয়ে অটোরিকশায় পালিয়ে যান। এই কৌশলে একাধিক নারী ছিনতাইকারী চক্র কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন মাসে অন্তত ১২টি ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একই রকম তথ্য দিয়েছে। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক নারী রোগীর কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিন নারী জনতার হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করেন। আদালত তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
সাজাপ্রাপ্ত তিন নারী হলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার এক্তিয়ারপুর গ্রামের হামিদা বেগম (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গণ্যগ্রামের আকলিমা বেগম (২৫) ও একই উপজেলার ধরমুল গ্রামের নাসিমা বেগম (২০)। এর মধ্যে হামিদাকে এক বছর, আকলিমাকে ছয় মাস এবং নাসিমাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
ইউএনও বলেন, ‘আদালতে প্রত্যেকে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে ভৈরবের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় তিন বছর ধরে চুরি-ছিনতাই করে আসছেন।’
সাজাপ্রাপ্ত নাসিমা বেগম বলেন, ‘হামিদা আমাদের টিম লিডার। হামিদার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা চুরি-ছিনতাই করে আসছি।’
সাজাপ্রাপ্ত অপর নারী আকলিমা বলেন, তাঁর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁকেও এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে।
ছিনতাইকারী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করে হামিদা বলেন, ভৈরবে তাঁরা প্রায় তিন বছর ধরে নারা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করছেন। হাসপাতালে সহজে ছিনতাইয়ের কাজ করা যায়। তাই হাসপাতালই তাঁর প্রথম পছন্দ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) কে এন এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রায়ই রোগীরা এসে নারী ছিনতাইকারীদের তৎপরতার বিষয়ে এসে অভিযোগ করছেন। আমাদের হিসাবে ৩ মাসে অন্তত ১২টি ঘটনা ঘটেছে। শেষে প্রতিকার পেতে ১৪ সেপ্টেম্বর আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। র্যাবের কাছেও অভিযোগ দিয়েছিলাম।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের ৮০ ভাগ নারী ও শিশু। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে প্রচণ্ড ভিড় হয়। ছিনতাইকারীরা ওই সময় ঘটনা ঘটায়। চক্রটির সদস্যরা নারী ও বোরকা পরে থাকায় সন্দেহ করার সুযোগ থাকে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাসের মধ্যে ভৈরব উপজেলা শহরের আল শেফা জেনারেল হাসপাতালে দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা রোগীদের কাছ থেকে মুঠোফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেন। এ ছাড়া তিন সপ্তাহ আগে ছিনতাইকারীরা মাতৃকা জেনারেল হাসপাতালে এসে এক রোগীর কাছ থেকে মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যান।