অটোচালককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসালেন পুলিশ কর্মকর্তা!
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সুনামগঞ্জে এক অটোরিকশাচালককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাম্য বিরোধের জের ধরে একটি পক্ষ এক উপপরিদর্শক (এসআই) এবং তাঁর তথ্যদাতাকে (সোর্স) দিয়ে অস্ত্রসহ তাঁকে গ্রেপ্তারের এ ঘটনা সাজান। পুলিশের প্রতিবেদনেই অটোরিকশাচালক নিরপরাধ এবং তাঁকে ফাঁসানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগী অটোরিকশাচালকের পরিবারের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, দুই পক্ষের কাছ থেকেই ঘুষ নিয়েছেন ওই এসআই শিবলী কায়েছ মীর। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঘটনার শিকার অটোরিকশাচালকের নাম নূর মিয়া (৩৮)। তাঁর বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার পূর্ব বুধরাইল গ্রামে। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর চাচা তারিফ উল্লাহ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। নূর মিয়া ১ মাস ১১ দিন কারাভোগের পর গত সোমবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, আগে থেকেই এ বিষয়ে তিনি কিছুটা অবগত। এখন তদন্ত করে যারাই দোষী হবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকার বলাকা সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে তাঁকে আটক করেন সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই শিবলী কায়েছ মীর। পরে সদর থানায় তিনি নূর মিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি নূর মিয়ার অটোরিকশায় থাকা ব্যাগ থেকে একটি হাতে তৈরি লোহার পাইপগান উদ্ধার করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
এই মামলাটি তদন্ত করছেন সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুর রহমান। ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে দেওয়া মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, আসামি নূর মিয়ার বড় ভাই এলাইছ মিয়া গ্রামের মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। মসজিদের গেট নির্মাণ নিয়ে কিছুদিন আগে গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে কায়েছ মিয়ার সঙ্গে নূর মিয়ার চাচাতো ভাই আকবুল হোসেন ও সুমিম মিয়ার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে কায়েছ মিয়া, একই গ্রামের আনিছুর রহমান ও তাঁর বন্ধু সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৈন্দা গ্রামের সালমান ইসলাম মিলে আকবুল ও সুমিমকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৪ আগস্ট জগন্নাথপুর থেকে নূর মিয়ার অটোরিকশায় আনিছ ও সালমান তাঁদের দুজন লোককে যাত্রী সাজিয়ে অস্ত্রসহ তুলে দেন। সুনামগঞ্জ শহরের বলাকা সিএনজি স্টেশনে এলে যাত্রীরা নেমে যান। সালমান তখন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ এসে অস্ত্র উদ্ধার করে।
পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, নূর মিয়া ষড়যন্ত্রের শিকার। এখন সালমান ও কায়েছকে গ্রেপ্তার করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সালমান এসআই কায়েছের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে আনিছুর রহমানের। প্রথমে আনিছুর সালমানকে এই পরিকল্পনার কথা জানান। পরে সালমান এসআই কায়েছের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে নূর মিয়াকে অস্ত্রসহ আটক করান। এসআই কায়েছের সঙ্গে চুক্তি ছিল, নূর মিয়ার সঙ্গে এই মামলায় ব্যবসায়ী আকবুল ও সুমিমকে পলাতক আসামি করতে হবে।
সালমান ইসলাম দাবি করেন, এসআই কায়েছ রাজি হওয়ার পরই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন তাঁরা। এ জন্য কায়েছ প্রথমে দুই লাখ ও পরে এক লাখ টাকা দাবি করলেও সর্বশেষ ৬০ হাজার টাকায় কাজটি করতে রাজি হন। ঘটনার পরই সালমান তাঁকে ৪০ হাজার টাকা দেন। পরে আরও টাকার জন্য চাপ দেন কায়েছ। কিন্তু মামলায় আকবুল ও সুমিমকে আসামি না করায় তাঁকে আর টাকা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এসআই মো. শিবলী কায়েছ মীর বলেন, ‘আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। বহু মানুষের সামনে নূর মিয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছি। কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। তবে অন্য এক লোক নূর মিয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সালমান ছাড়া অন্য কাউকে আমি চিনি না। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আমি নূর মিয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছি।’
তবে এ বিষয়ে নূর মিয়ার চাচা তারিফ উল্লাহ পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করছেন, নূর মিয়াকে ধরার পর এসআই কায়েছ তাঁর ভাই এলাইছ মিয়াকে ফোন করে এক লাখ টাকা চান। টাকা পেলে সিএনজিসহ তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হবে বলে জানান। সে অনুযায়ী ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় সদর থানার পাশের তাহিতি রেস্তোরাঁর সামনে এসআই কায়েছকে এক লাখ টাকা দেন তাঁরা। কিন্তু পরে আর তাঁকে ছাড়া হয়নি।