দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতু
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে স্প্যান বসানোর কাজ তদারকি করেন।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। আজ প্রথম স্প্যানটি বসানো হলো। চীনে তৈরি এই স্প্যানটির অংশগুলো সমুদ্রপথে জাহাজে করে দেশে আনা হয়। সেখান থেকে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নিয়ে তা ফিটিং করা হয়। এটির ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। ৩ হাজার ৭০০ টন ওজনের একটি ভাসমান ক্রেন দিয়ে মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তে এটি আনা হয়। গত রোববার মাওয়া থেকে যাত্রা শুরু করে সোমবার সকালে জাজিরায় ৩১ নম্বর খুঁটির সামনে স্প্যানটি পৌঁছে। এখান থেকে আবার ড্রেজিং করে গতকাল শুক্রবার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি ক্রেনটি নেওয়া হয়। বেলা দুইটার দিকে ক্রেন দিয়ে খুঁটির ওপরে স্প্যানটি তোলার কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যার দিকে এক মিটার ব্যবধানে স্প্যানটি খুঁটি বরাবর ঝুলিয়ে রাখা হয়। আজ সকাল আটটা থেকে আবার কাজ শুরু হয়। নয়টার দিকে নাটবল্টু স্প্যানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্প্যানটি পুরোপুরি খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়।
এই কাজ দেখার জন্য আজ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সেতু বিভাগ ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুর দ্বিতীয় স্প্যানটি অক্টোবর মাসের শেষের দিকে স্থাপন করা হবে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ১২টি স্প্যান চীন থেকে শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর আগে মাওয়ায় ১০টি স্প্যান চলে এসেছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সেতুতে মোট খুঁটি (পিলার) হবে ৪২টি। এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। বর্তমানে ১৬টি খুঁটি নির্মাণের কাজ চলমান।
এভাবেই দৃশ্যমান হচ্ছে সেতু। ছবি: সাজিদ হোসেন
পদ্মা সেতুর প্রতিটি খুঁটির নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬৮টি পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ১৭টি পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে।
২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। তাতে খরচ ধরা হয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এই কাজের খরচ ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে।
দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন।