তামিম-মুমিনুলের ব্যাটই ভরসা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চা-বিরতির পর শেষ সেশনটা শুরু হলো চমক দিয়ে। তা-ও একটি নয়, দুটি! আগে একটুও আভাস না দিয়ে বিরতির সময় ইনিংস ঘোষণা করে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। স্কোরবোর্ডে তখন প্রোটিয়াদের রান ৩ উইকেটে ৪৯৬। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝি অনন্তকাল ব্যাট করে যাবে।
ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে এত ‘অল্প’ রানে প্রোটিয়াদের ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া যদি প্রথম চমক হয়, দ্বিতীয় চমকটা বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে। উদ্বোধনী জুটি হিসেবে ব্যাট করতে নামলেন ইমরুল কায়েস-লিটন দাস। তামিম ইকবাল নেই! উত্তরটা জানা গেল খানিক পর। চা-বিরতির আগের সেশনে ফিল্ডিংয়ের সময় শেষ ৪৯ মিনিট মাঠে ছিলেন না তামিম। ওই সময় ইনিংস ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামার ৪৯ মিনিটে পরে নামার কথা তামিমের। কে জানে তামিমকে বাইরে দেখেই দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন কি না!
৪৯ মিনিটের আগেই বাংলাদেশের ২ উইকেট পড়ে যাওয়ায় চারেও নামা হয়নি তামিমের। শেষ পর্যন্ত নেমেছেন পাঁচ নম্বরে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই প্রথম ওপেনিং ছাড়া অন্য কোনো পজিশনে ব্যাট করতে নামলেন তামিম। বাংলাদেশের হয়ে এর আগে ৫২ টেস্টের ৯৮ ইনিংসের সব কটিতেই শুধু ওপেনই করেননি, আগে স্ট্রাইকও নিয়েছেন।
তামিম-মুমিনুল জুটি আর কোনো বিপদ না হতে দেওয়ায় বাংলাদেশ দিনটা শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে। মুমিনুল ব্যাট করছেন ২৮ রানে, ২২ রানে অপরাজিত তামিম। এ দুজনের ব্যাটের দিকেই আজ তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
১৪৬ ওভার কিপিং করার ক্লান্তি নিয়ে লিটন ওপেন করতে নেমেছিলেন। খেলছিলেনও দারুণ। চারটি চার মেরেছেন, সবগুলোই মরনে মরকেলকে। কিন্তু ২৯ বলে ২৫ রান করে শেষ পর্যন্ত সেই মরকেলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটাই খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে যান হাশিম আমলাকে।
ইমরুল ফিরেছেন তাঁরও আগে, কাগিসো রাবাদার শর্ট বল সামলাতে না পেরে। বেশ কিছুদিন পর নিজের প্রিয় পজিশন ওপেনিংয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। আউট মাত্র ৭ রান করেই। সর্বশেষ ৯ ইনিংসে তাঁর কোনো ফিফটি নেই, ১৬ ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি।
মুশফিক-মুমিনুলের তৃতীয় উইকেট জুটি কিছুক্ষণের জন্য হলেও আশা জাগিয়েছিল। যদিও মুশফিক জীবন ফিরে পেয়েছেন দুবার—৬ ও ১৫ রানে। দুবারই দুর্ভাগা বোলার কেশব মহারাজ, দুবারই অপরাধী ফিল্ডারের নাম ডিন এলগার। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫৭ বলে ৪৪ রান করে ফিরে গেছেন সেই মহারাজের বাঁহাতি স্পিনেই, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে এইডেন মার্করামকে ক্যাচ দিয়ে। আউট হওয়ার আগে অবশ্য মহারাজকে দুর্দান্ত একটা ছক্কা মেরেছেন মুশফিক।
যে উইকেটে পাঁচ সেশন ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েছে, সেখানে এক সেশনেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা শঙ্কার তো অবশ্যই। প্রায় দুই দিন বলতে গেলে আয়েশি ঢঙে ব্যাট করে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের দিন ৬৮ রানে অপরাজিত থাকা হাশিম আমলা কাল মধ্যাহ্নবিরতির আগেই পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরিটা। সেঞ্চুরিসংখ্যায় সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে ছুঁলেন আমলা। দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে এ দুজনের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু জ্যাক ক্যালিসের (৪৫)। ২০০ বলে ১৭ চার আর এক ছক্কায় ১৩৭ রান করে আমলা শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন শফিউল ইসলামের বলে।
আমলার সঙ্গে মিলে প্রায় দিনভর বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছেন এলগার। ১২৮ রান নিয়ে দিনটা শুরু করেছিলেন, মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন ফেরেন নামের পাশে রান ১৯৯! আগের দিন এইডেন মার্করাম সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থেমেছিলেন এলগারের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝিতে। কাল এলগার নিজেই অকারণ এক শট খেলে বঞ্চিত হলেন ডাবল সেঞ্চুরি থেকে। টেস্ট ইতিহাসের ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯ রানে থেমে গেলেন এলগার। এর মধ্যে দুজন (অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও কুমার সাঙ্গাকারা) অবশ্য অপরাজিত থেকে গিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অবশ্য তাঁর আগে আর কেউ ১৯৯ রানে আউট হননি বা অপরাজিতও থাকেননি!
(দ্বিতীয় দিন শেষে)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৯৬/৩ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১২৭/৩