ফুটপাতে ছয় নার্সারি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সাত মসজিদ রোডের দুই পাশের ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অন্তত ছয়টি নার্সারি। ফুটপাতের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে নার্সারিগুলো। এ কারণে পথচারীরা এসব ফুটপাত দিয়ে স্বচ্ছন্দে চলতে পারছেন না।
এসব নার্সারির মালিক ও কর্মচারীরা নির্লিপ্তভাবেই বলেছেন, নার্সারি বানিয়ে ফুটপাতে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে এলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা এ পর্যন্ত আসেনি। তবে একজন নার্সারি-মালিক দাবি করেছেন, এ জন্য পুলিশকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়।
শংকর থেকে জিগাতলার দিকে খানিকটা এগোতে হাতের বাঁ পাশের ফুটপাতে একটি নার্সারি। নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের টব ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের নিচে ফুটপাতের প্রায় অর্ধেক হারিয়ে গেছে। বাকিটাতে সারা দিন বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন, ক্রেতাদের সঙ্গে দেনদরবার করেন। ফলে পথচারীদের কেউ ফুটপাত ধরে এলেও এখানে এসে তাঁকে রাস্তায় নেমে পড়তে হয়।
নামহীন এই নার্সারির মালিকের ছেলে বলে পরিচয় দেওয়া শামীম আহমেদ জানান, তাঁরা এখানে ব্যবসা করছেন দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এর আগে তাঁরা নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুরের ফুটপাতে ব্যবসা করতেন। সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়ার পর এখানে এসে বসেছেন।
এখানে বসতে কারও অনুমতি নিতে হয়েছে কি না—জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘ব্যবসা চালাতে পুলিশকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়। নিজের মা-বাপরে খাওয়াইতে না পারলেও পুলিশকে টাকা দিতে হইব।’
জিগাতলার দিকে আরও খানিকটা সামনে এগোলে ফুটপাতের ওপরে পাশাপাশি আরও দুটি নার্সারি। একটু আগে ভারী বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানাকার মাটির টবগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। গাছগুলো সাজানো আছে। তবে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
আরও সামনে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু আগে আরেকটি নার্সারিতে ক্রেতার সঙ্গে গাছের দরদাম করছিলেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে নার্সারির মালিক পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, তিনি এখানে চার বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। আগে এই ফুটপাতসহ সামনের অংশে ময়লার একটি ভাগাড় ছিল। লোকজন চলাচল করতে পারতেন না। সেগুলো পরিষ্কার করে তিনি এই নার্সারি বসিয়েছেন। এখানে ব্যবসা করার জন্য কাউকে টাকা দিতে হয় না। সিটি করপোরেশনও এখন পর্যন্ত কোনো ‘ঝামেলা’ করেনি।
নজরুল ইসলামের নার্সারি থেকে ঘুরে আবার শংকরের দিকে যেতে সড়কের বিপরীত পাশে আবাহনী মাঠের উল্টো দিকে আরেকটি নার্সারির খোঁজ মিলল। সেখানে কথা বলার মতো কেউ ছিলেন না। তবে সামনে এমন আরেকটি নার্সারির কর্মচারী জালাল শেখ জানান, তাঁর মালিকের ব্যবসা চার-পাঁচ বছরের। তিনি এখানে দুই মাস আগে এসেছেন।
দেখা যায়, এই নার্সারির গাছ-টবসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যেভাবে রাখা হয়েছে, তাতে ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা তাদের দখলে চলে গেছে। ফুটপাত ধরে হেঁটে আসা পথচারীরা এই অংশে এসে ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তায় নেমে আসছেন।
এই এলাকাটি পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা এসব নার্সারির বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন গতকাল শনিবার বলেন, ‘আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। যাতে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নার্সারিগুলো উচ্ছেদে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’