প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে: ফখরুল

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের জের ধরে প্রধান বিচারপতিকে এক মাসের ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটি দেশের বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে একটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি করেন। মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের জরুরি বৈঠকের পর তিনি দলের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সর্বসম্মত রায় দেওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালত এবং তাঁর সম্মানিত বিচারপতিগণকে সরকারপ্রধান থেকে সরকারের মন্ত্রী, সরকারি দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা অসাংবিধানিক, অযৌক্তিক ও কুৎসিত ভাষায় সমালোচনা করে চলেছেন। এমনকি জাতীয় সংসদে যে ভাষায় সর্বোচ্চ আদালত ও তাঁর বিচারপতিগণের সমালোচনা করা হয়েছে, তা শুধু অভূতপূর্ব নয়, অস্বাভাবিকও।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় পছন্দ না হলে তা রিভিউ করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরকার দেশের প্রবীণ বিচারপতিকে নজিরবিহীনভাবে ছুটি নিতে বাধ্য করার যে নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তার বিরুদ্ধে দেশের আইনজীবী সমাজের পাশাপাশি সচেতন জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।’ তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি মাত্র কয়েক দিন আগে জাপান ও কানাডা সফর করে এসেছেন। এসব দেশে উন্নত চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে দেশবাসী জানে না। এমনকি গত পরশু তিনি সুপ্রিম কোর্টে তাঁর কার্যালয়ে বসে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফাইল সই করেছেন।

প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর দাবির ভিত্তি কী—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর থেকে প্রধান বিচারপতির ওপর ব্যক্তিগতভাবে এবং তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। তাঁকে তাঁর পরিণতির কথা বলা হয়েছে, ছুটি নিয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে, এমনকি পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এর থেকে সমগ্র জাতির কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট, যেহেতু ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার ব্যাপারে তারা (সরকার) একমত হননি, তীব্র ভাষায় তাঁর সমালোচনা করেছেন। সুতরাং তাঁকে জোর করে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কমেন্টস পাইনি। তিনি ছুটি নিয়েছেন, বা কী অবস্থায় আছেন, অসুখ হয়েছে কি না—এ সব বিষয়ে তাঁর কার্যালয় থেকে কোনো তথ্য পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘গতকাল আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনি (প্রধান বিচারপতি) নাকি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু গত পরশু সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎপ্রার্থী সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাঁর পক্ষ থেকে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “আমি সুস্থ আছি কিন্তু কথা বলতে পারব না”।’ তিনি বলেন, এসব কিছু থেকে প্রমাণিত হয় যে প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। তাঁকে জোর করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

‘ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গেছে, তাই বিএনপি কান্নাকাটি করছে’—আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা নতুন কিছু নয়। আইনমন্ত্রী বলেন, অন্য মন্ত্রীরা বলেন, সারাক্ষণ তো আঙুলটা বিএনপির দিকে। এর কারণটা হচ্ছে বিএনপি সব সময় সত্য-বাস্তব কথাটা তুলে ধরে। রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য তারা যে চক্রান্ত করছে, রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করার জন্য তারা যে একের পর এক রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো ভেঙে দিচ্ছে-এটাকে ঢাকা দেওয়ার জন্য উল্টো বিএনপির দিকে চাপিয়ে দিচ্ছে।

সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে সরকার আক্রোশমূলক ও ঘৃণ্য আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি এসবের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘শক্তি প্রয়োগের দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে অনুগত করার সরকারি অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ