পানির কষ্টে এলাকা ছাড়ছেন পূর্ব কাজীপাড়ার ভাড়াটেরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে পানির তীব্র সংকটে ভুগছে পূর্ব কাজীপাড়ার সাত থেকে আট শ পরিবার। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিনই তারা ওয়াসার লাইনে পানি পাচ্ছে না। রাস্তা খারাপ থাকায় ওয়াসার পানির গাড়িও ঢুকছে না এই এলাকায়। পানির কারণে অনেক ভাড়াটে এখন এলাকা বদলাতে চান বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিকেরা।
ওয়াসা দাবি করছে, এলাকায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন পাম্প না বসালে সমাধান নেই। কিন্তু জায়গার অভাবে নতুন পাম্প বসানো যাচ্ছে না।
এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, পূর্ব কাজীপাড়ার মাতবর পুকুরপাড় এলাকার পাম্প স্টেশন থেকে এই এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে মাতবর পুকুরপাড়া এলাকায় প্রায় এক কাঠা জমি কিনে ওয়াসাকে দেয়। ওয়াসা সেখানে পাম্প বসায়। এখন ওয়াসা নতুন করে আরও একটি পাম্প বসানোর জন্য স্থানীয় লোকজনের কাছে জমি চেয়েছে। জমি পেলে নতুন পাম্প বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার এই এলাকায় কথা হয় মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সৈয়দ লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কর্মস্থলের কাছে হওয়ায় এক বছর আগে তিনি পূর্ব কাজীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পানির কারণে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। গোসলের জন্য যেতে হচ্ছে আত্মীয়স্বজনের বাসায়। অন্য এলাকায় বাসা খুঁজছেন বলে জানান তিনি।
রাশিদুল হাসান নামে স্থানীয় এক বাড়ির মালিক বলেন, চলতি সপ্তাহে গত শনিবার ও সোমবার বিকেলে ওয়াসার লাইনে পানি এসেছিল। কিছুক্ষণ পরই আবার চলে যায়। ওই পানিই পাত্রে ধরে রেখে সারতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ। আবার রাস্তা এতই খারাপ যে পানির গাড়ি আসতে পারে না। তিনি বলেন, পানির সমস্যার কারণে ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়ির নিচতলার ভাড়াটে চলে গেছেন।
স্থানীয় আরেক বাড়ির মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, পানির সমস্যা সমাধানে ওয়াসার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে ওয়াসার লোকজন পাম্পে এসেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পাম্পে পানি আসছে না। দিন-রাতের চেষ্টায় প্রতিদিন ৩০০-৪০০ লিটার পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে। এই পানিই একেক দিন একেক লাইনে দিচ্ছে ওয়াসা। তিনিসহ কয়েকজন বাড়ির মালিক অভিযোগ করেছেন, একেক দিন একেক লাইনে পানি যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে স্থানীয় একটি চক্র। এই চক্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বাড়ি থেকে অনেক সামনে গিয়ে ওয়াসার লাইন কেটে বিকল্প লাইন লাগিয়ে দিচ্ছে। এতে কয়েক বাড়ি বাদ দিয়ে বিকল্প লাইন থাকা বাড়িতে আগে পানি যাচ্ছে। এতে পানির অরাজকতা আরও বাড়ছে।
গত রোববার রাতেও এই চক্রটিকে ১০ নম্বর বাড়ির সামনে ওয়াসার পাইপ কেটে পানির বিকল্প সংযোগ দিতে দেখা গেছে। ১১ নম্বর বাড়ির সামনেও গত রমজানের সময় ১০-১৫টি অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে আশপাশের একাধিক বাড়ির মালিক ও পাহারাদারের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তাঁদের কয়েকজন স্থানীয় একজন মিস্ত্রির নাম বলেছেন। ওই মিস্ত্রির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা দিন হাজিরায় কাজ করি। লাইন দেওয়ার ক্ষমতা কি আমার আছে?’ তাহলে কারা এই কাজ করছে—জানতে চাইলে এই মিস্ত্রি বলেন, ‘রাজনীতির লোকেরা।’ পূর্ব কাজীপাড়া এলাকায় এমন ৫০ থেকে ৬০টি লাইন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ সম্পর্কে জানতে ওয়াসার জোন-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মজিদের মুঠোফোনে যোগযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পানির সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, এখন যেখানে পাম্প আছে, সেখানে নতুন পাম্প বসানোর জায়গা নেই। ওই এলাকার পানির সমস্যা সমাধান করতে হলে নতুন পাম্প বসাতে হবে।
জানা গেছে, নতুন পাম্প স্টেশনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করতে গত বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠক করেছে পূর্ব কাজীপাড়া মাতবর পুকুরপাড় প্রান্তিক কল্যাণ সমিতি। সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখনকার পাম্প স্টেশনটি যেখানে আছে, সেখানকার প্রায় এক কাঠা জায়গা বিক্রি করে আরেকটু বড় জায়গা কিনে ওয়াসাকে পাম্প বসানোর জন্য দেওয়া হবে।