নির্বাচনের আগে কাউকে ডাকবে না ইসি

ECরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘স্বাগত’ জানানো হবে, তবে তাদের ‘আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ’ জানাবে না নির্বাচন কমিশন।

দশম সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কার মধ্যেই সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বিশেষজ্ঞ দলের। স্থানীয় দূতাবাস ইসিকে বিষয়টি জানিয়ে ‘আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ’ চাইলেও এমন নিস্পৃহ জবাবই দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

সংবিধান অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে কোনো এক সময়ে বর্তমান সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু এ নির্বাচন নির্দলীয় ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি। দাবি না মানলে ভোট বর্জনেরও হুমকি দিয়ে রেখেছে দলটি।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে সংলাপের চাপ থাকলেও দুপক্ষই অনড়।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসে। তারা দেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। এবারও ঢাকার  ইইউ কার্যালয় একটি প্রতিনিধি দলের সফরের কথা জানিয়ে কমিশনের ‘ইনভাইটেশন’ চেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “নির্বাচনের সময়ই আমরা এ ধরনের সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকি। নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগেই তারা এলে কথা বলতে আপত্তি নেই আমাদের। সব সময় আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের তো অনেক ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। একটি দলকে এখন আমন্ত্রণ জানাতে পারি না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।”

তবে নির্বাচনের আগে এসব সংস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করে থাকে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয় বা বিভাগও পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাতে পারে বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব।

তিনি বলেন, “ইইউর আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন- এলে সময় দেবেন তিনি। কিন্তু একটি সংস্থাকে আগাম আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো সম্ভব হবে না।”

আর এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করেন মোহাম্মদ সাদিক।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুই দলের বিরোধের মধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা শুরু হয় গত ডিসেম্বরে।

এর অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। সে সময় জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা থালেদা জিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন।

নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য এ মেয়াদে আন্তর্জাতিক কোনো মিশনের এটাই প্রথম সফর বলে সে সময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সাদিয়া মুনা তাসনিম।

তিনি বলেছিলেন, তারানকোর ওই সফর নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আগমনের সূচনা মাত্র । কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের আরো মিশন ভবিষ্যতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।

সর্বশেষ নবম সংসদ নির্বাচনে ১৭টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ৬৭৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সফর করে করেন বলে ইসির জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান।

সংলাপ নিয়ে সিদ্ধান্তহীন ইসি

ডিসেম্বরের সফরে জাতিসংঘ কর্মকর্তা ফার্নান্দেজ তারানকো বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য জরুরি।

“কীভাবে এই ঐকমত্য তৈরি হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু সমাধানের পথ খুঁজতে জাতিসংঘ সংলাপ ও মতবিনিময়কে উৎসাহিত করে।”

তবে সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত ২৫ জুলাই সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সময় হলেই তারা বিষয়টি দেখবেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ