এক পদে থেকে অন্য পদের কাজে
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা ওয়াসায় শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতা-কর্মীসহ ও তাঁদের লোকজন এক পদে চাকরি করে আর্থিকভাবে ‘লোভনীয়’ অন্য কাজে নিয়োজিত থাকছেন। অভিযোগ রয়েছে, দুই জায়গা থেকেই তাঁরা টাকা পাচ্ছেন। অন্তত ১০ জনের ক্ষেত্রে এ রকম অনিয়ম দেখা গেছে।
ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, একাধিক কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন কেন্দ্রীয় সিবিএর সভাপতি মো. হাফিজউদ্দিনের ভাই মো. শামসুজ্জামান, শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের ভাতিজা মো. মেহেদি হাসান, কেন্দ্রীয় সিবিএর সদস্য গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান, আঞ্চলিক নেতা আহসান হাবিব, আসকারী ইবনে সাইক, ফজলুল হক, মো. নাসির উদ্দিন, মির্জা আবদুর রহিম ও মো. শরীফ। তাঁদের বেশির ভাগই নিজের কাজ ছেড়ে রাজস্ব পরিদর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। কারণ, এ কাজটি ওয়াসার কর্মীদের ভাষায় ‘আর্থিকভাবে লোভনীয়’।
ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তার মতে, রাজস্ব আদায়ের কাজে থাকলে একজন অসাধু গ্রাহকের বিপুল অঙ্কের বিল কমিয়ে আনা যায়। আবার নিরীহ গ্রাহকের ছোট বিলকে ‘ভুতুড়ে বড় বিল’ সাজিয়ে উৎকোচ নেওয়া যায়। এ কাজের জন্য কোনো নিয়োগপত্র না থাকলেও অন্য পদের লোকেরা প্রভাব খাটিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ নিয়ে নেন। তাঁদের দাপটে প্রকৃত রাজস্ব পরিদর্শকদের অনেকে কোণঠাসা হয়ে থাকেন। আঞ্চলিক রাজস্ব কর্মকর্তারা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেন না। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে তালিকা চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সিবিএর সভাপতি মো. হাফিজ উদ্দিনের ভাই মো. শামসুজ্জামান। তাঁর আনুষ্ঠানিক পদবি পাম্প অপারেটর। কিন্তু ওয়াসার রাজস্ব অঞ্চল-২-এর বিভিন্ন এলাকায় রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ করছেন তিনি। জানা গেছে, ওই অঞ্চলে শামসুজ্জামান ও তাঁর লোকেরা ৬০০ বাড়ি (হোল্ডিং) থেকে বিল আদায় করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ বাড়িতে মাসিক ১০ হাজার টাকা বিল হলে পরিদর্শক তিন হাজার টাকা বিল বানিয়ে দেন। এটা করা হয় মিটার কারসাজির মাধ্যমে।
জানতে চাইলে মো. শামসুজ্জামান বলেন, তিনি রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ এখন আর করেন না। পাম্প অপারেটর হিসেবে আরমানিটোলায় আট ঘণ্টা কাজ করেন। কায়েতটুলীতে ১২ ঘণ্টা ওভারটাইম করেন। এভাবে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লোক কম বলে ২২ ঘণ্টা কাজ করি।’
তবে অঞ্চল-২-এ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসেও তিনি রাজস্ব আদায়ে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
শামসুজ্জামানের বড় ভাই ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ) ও ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন বলেন, তাঁর ভাই একা শুধু নন, অনেকেই রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ করছেন। তবে এটা বেআইনি বলে তিনি স্বীকার করেন।
ওয়াসার শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের ভাতিজা মেহেদি হাসান অঞ্চল-১-এর (সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী) সহকারী পাম্প অপারেটর। বাড়তি কাজ করছেন রাজস্ব পরিদর্শক হিসেবে। জানতে চাইলে মেহেদি হাসান বলেন, তিনি মাঝেমধ্যে রাজস্ব আদায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে থাকেন।
ওয়াসা ভোগ্যপণ্য সমবায় সমিতির উপদেষ্টা জাবের হোসেনের ভাই এইচ এম জাকির হোসেন ওয়াসা-৬ নম্বর অঞ্চলে (ফকিরাপুল) সিবিএর সাধারণ সম্পাদক। পাম্প অপারেটর হিসেবে তিনি যতটা সময় দেন, তার চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন রাজস্ব পরিদর্শক হিসেবে।
ওয়াসা কর্মচারী ইউনিয়নের ক্রীড়া সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান (অঞ্চল-১) নারিন্দা কেন্দ্রীয় পাম্পের অপারেটর। অথচ বনগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় রাজস্ব পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। যোগাযোগ করা হলে আক্তারুজ্জামান বলেন, তিনি ওভারটাইমসহ ১২ ঘণ্টা অপারেটরের কাজ করেন। রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ অপপ্রচার।
টিকাটুলী এলাকায় পাম্প অপারেটর হলেও রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ করছেন আঞ্চলিক সিবিএর সভাপতি আহসান হাবিব এবং সাধারণ সম্পাদক আসকারী ইবনে সাইক। একই কাজ করছেন ওয়াসা অঞ্চল-২-এর (চাঁদনীঘাট) সিবিএর সদস্য ফজলুল হক ও মো. নাসির উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় সিবিএর সদস্য পাম্প অপারেটর গোলাম মোস্তফা। অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন নেতা মির্জা আবদুর রহিম এখন ওয়াসার ১ নম্বর অঞ্চলে (যাত্রাবাড়ী) পরিদর্শক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তবে তিনি নিজে রাজস্ব আদায়ে থাকেন না, আতাউর নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে কাজটি করান।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হোসেন বলেন, একজন কর্মচারীর দুই জায়গায় কাজ করা বা প্রক্সি দেওয়া অবশ্যই অপরাধ। এ বিষয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।