একের পর এক দল, লক্ষ্য নির্বাচন
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বাড়ছে। গত সাত মাসে বিজেপি, বিএমজেপিসহ অন্তত পাঁচটি নতুন দল হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার আগেই দলগুলো ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতারও ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া নামসর্বস্ব দল নিয়ে নতুন নতুন জোট গঠনেরও ঘোষণা এসেছে।
এসব দল ও জোটের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করছে এসব দল-জোটের ভবিষ্যৎ। আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হলে এসব নামসর্বস্ব দল ও জোটের নেতারা গুরুত্ব পাবেন বলে আশা করছেন।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান আদিবাসী পার্টিসহ সমমনা নামসর্বস্ব অর্ধশতাধিক সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি)। একই সম্প্রদায় থেকে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) নামে আরেকটি দল। দল দুটি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেয়। যদিও নির্বাচন কমিশনে কারও নিবন্ধন নেই।
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা অক্টোবরে নিবন্ধনের আবেদন করব। আশা করছি, ফেব্রুয়ারিতে পেয়ে যাব এবং নির্বাচনে ৩০০ আসনে অংশ নেব।’
গত মার্চ ও এপ্রিলে ট্রুথ পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ জনতা পার্টি নামে তিনটি দলের জন্ম হয়। দলগুলোর প্রতিষ্ঠাতারা আগে বড় দলে ছিলেন। গুরুত্ব হারিয়ে তাঁরা নতুন দল করেন। বিএনপি ও এলডিপি হয়ে জনতা পার্টি গঠন করেন মামদুদুর রহমান। ট্রুথ পার্টির সভাপতি গোলাম হাবিব ও মহাসচিব গোলাম মাওলা চৌধুরী জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা ছিলেন। এনডিএমের ববি হাজ্জাজও জাপায় ছিলেন। তিনি বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মীজানূর রহমান শেলীর মতে, এটা অস্থিতিশীল রাজনীতির প্রতিফলন। এখন দেশে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু রয়েছে বলে মনে করা হয়, তা নির্ভেজাল, খাঁটি ও অকৃত্রিম গণতন্ত্র নয়। এখানে ঘাটতি রয়েছে। নতুন নতুন দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টার প্রবণতা।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০টি। এর বাইরে ঠিক কতটি দল আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
নির্বাচন ঘিরে যেমন নতুন দল ও জোট গড়ে উঠছে, তেমনি ভাঙছেও। বিএনপির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০–দলীয় জোট ছাড়েন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রয়াত শওকত হোসেন (নীলু)। তিনি কিছু নামসর্বস্ব দল নিয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করেন। গত মার্চে এনপিপি ও জোট দুটিই ভেঙে যায়। এনপিপির মহাসচিব আবদুল হাই মণ্ডল নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। তিনি অচেনা কিছু সংগঠন নিয়ে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে আরেকটি জোট গড়েন। এর প্রধান সমন্বয়কারী হন আলমগীর মজুমদার, যিনি বিএনপির জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ভেঙে নীলুর এনডিএফে যোগ দিয়েছিলেন।
গত এপ্রিলে দুই ভাগ হয় প্রয়াত মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। একই সময়ে ভাঙে বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার গড়া কথিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ)। বিএনএর অধিকাংশ দল যোগ দেয় এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোটে।
ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টিও দুই ভাগ হয়। কোরেশী অসুস্থ হলে দলের এক নেতা দেলোয়ার হোসেন নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। পরে কোরেশীর স্ত্রী নিলুফার পান্নাকে পিডিপির কো-চেয়ারম্যান করা হয়।
এরশাদের উদ্যোগে ৫৬ দল নিয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট নামে যে জোট হয়, তাতে বিএনএ নামে একটি উপজোট আছে। এতে বাংলাদেশ তফসিল ফেডারেশন, বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পার্টি, জাতীয় হিন্দু লীগ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল মাইনরিটি পার্টি নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেন্দ্রিক চারটি দল আছে। এর মধ্যে তফসিল ফেডারেশন ও সচেতন হিন্দু পার্টি গত সপ্তাহে জন্ম নেওয়া বিজেপিতেও আছে।
এ বিষয়ে এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, ‘এগুলো অখাদ্য-কুখাদ্য। তাই এগুলোকে বিএনএ জোট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’