ঢাকায় নিহতদের ৭২% পথচারী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির গাড়ি ধাক্কা দেয় মা ও মেয়েকে। মেয়ে নূর নাহার প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যান মা আসমা বেগম। এর ঠিক ১০ দিন আগে মিরপুরে দ্রুতগতির বাসচাপায় মারা যায় ১২ বছরের তাসনিম আলম। মায়ের হাত ধরে স্কুল থেকে ফিরছিল মেয়েটি।
বাংলাদেশ পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সাল—এই ১৬ বছরে কেবল রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৬৫৪ জন। তাদের অধিকাংশই মারা গেছে সড়ক পারাপারের সময়। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা রাজধানীতে দুর্ঘটনার জন্য চালক ও পথচারীদের অসতর্কতা এবং যানবাহনের বেপরোয়া গতিকেই দায়ী করছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। এআরআই ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর মোড়গুলোতে দুর্ঘটনার প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা যায়, সবচেয়ে প্রাণঘাতী স্থান হচ্ছে ৫৪টি ব্যস্ত মোড়। দেশের সব মহানগরে যত পথচারী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, এর দ্বিগুণের বেশি মারা যায় শুধু ঢাকা মহানগরে। অবশ্য ঢাকায় মানুষ ও যানবাহন দুটোই বেশি। সারা দেশের মহানগরগুলোতে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশই ঢাকার। নিহত পথচারীদের ৭২ শতাংশ ঢাকায়।
এআরআইয়ের গবেষক ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ঢাকার সড়কে যানজট বেশি। তাই বেশি গতি তুলে দুর্ঘটনায় পড়ার হার কম। এখানে বেপরোয়া গতি বলতে মোড়ে বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে বোঝানো হয়েছে। মোড়গুলোতে সংকেতব্যবস্থা কার্যকর নয় বলে যানবাহনগুলো ঠিকমতো পুলিশের থামার সংকেত মানে না বা দেখে না। এতে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পথচারীরা।
কাজী সাইফুন বলেন, প্রকৌশলবিদ্যায় মোড়ের গুরুত্বভেদে ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো যানবাহন দাঁড়ানো নিষিদ্ধ। কিন্তু ঢাকায় সব যাত্রী ওঠানামা করানো হয় মোড়ে। পাল্টাপাল্টি করে বেপরোয়া বাস চালাতে গিয়ে পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশের কাজ হয়ে গেছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ। তারা পথচারীদের দিকে খেয়াল করে না।
এআরআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, রাজধানীর প্রাণঘাতী ব্যস্ত ৫৪টি মোড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়টি মোড়। এগুলো হচ্ছে উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়ক মোড়, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কারওয়ান বাজার, বনানীর কাকলী, বিজয় সরণি, জোয়ার সাহারা ও শ্যামলী।
তবে পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনগুলোর সূত্র বলছে, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক চালুর পর সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী মোড়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কিছুটা কমে এসেছে।
কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, প্রকৌশলগত ত্রুটি ও সচেতনতার অভাবে পথচারীরা মারা যাচ্ছে। প্রকৌশলগত ত্রুটির মধ্যে রয়েছে সব স্থানে জেব্রা ক্রসিং না থাকা, ফুটপাত না থাকা কিংবা অবৈধ দখলে চলে যাওয়া, স্বয়ংক্রিয় সংকেতব্যবস্থার অনুপস্থিতি, পথচারী পারাপারে অব্যবস্থাপনা। ঢাকায় অনেক পদচারী-সেতু আছে। কিন্তু এর অনেকগুলো সঠিক স্থানে নেই।