এনআইডি সংশোধনে অহেতুক ঘোরাঘুরি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: তারেক হোসেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য গাজীপুরে নিজ থানায় ঘুরেছেন। কিন্তু কয়েকবার তারিখ দিয়েও কাজ হয়নি। সর্বশেষ বলা হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যেতে। তাঁর দরকার এ মাসেই। শেষ ভরসা ভেবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গেছেন। তবে তিনি জানেন না এখানে কাজ হবে কি না।
সংশোধনের কাজ উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হলেও স্থানীয় কার্যালয়গুলোয় দেরি হওয়ায় অনেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেন। মূলত সেবা পাওয়ার ব্যাপারে গ্রাহকের কাছে সব ধরনের তথ্য না থাকায় অহেতুক ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, এখন এনআইডি সংশোধন ভোটারের নিজ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে করতে হয়। এনআইডির সমস্যার সমাধান সম্পর্কে উপজেলা কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নিলে গ্রাহককে অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। দেখা যায়, না জানার কারণে গ্রাহক অহেতুক এই অফিস-ওই অফিসে ঘোরাঘুরি করেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন অফিসের ইলেকট্রোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনের নিচে প্রতিদিনই থাকে মানুষের জটলা। তথ্যকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন। সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারিয়ে যাওয়া ও নতুন করে তুলতে আসা লোকজনই এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। তথ্যকেন্দ্রের দেয়ালে লেখা, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য নিজ নিজ থানা বা উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। এ অফিসে মূলত হারিয়ে যাওয়া কার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে নিবন্ধন করা কার্ড দেওয়া হয়।
তবে সেবা নিতে আসা বেশির ভাগ লোকই সংশোধনের কাজে আসেন। আজমেরী নির্ঝর ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য জামালপুরে নিজ থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে এক মাস বলা হলেও কাজ হয়নি। তিনি বলেন, ‘এই কার্ডের জন্য আমার এক জায়গায় টাকা আটকে আছে। জামালপুরে না হওয়ায় এখানে এসে বললাম, তাও বলে আরও এক মাস। আমার অফিস লালমনিরহাটে। এটা তো একটা হয়রানি।’
ডেমরার বাসিন্দা মৌসুমি আক্তার ৬/৭ বছর অাগে ভোটার আইডির আবেদন করেন। এরপরে নানান পরিবর্তন এলেও তিনি কার্ড পাননি। তবে এখন তাঁর কার্ডটি প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘ডেমরার অফিসে গেলে আমাকে এইবার বলা হয়, তাঁদের ফিঙ্গার প্রিন্টের মেশিন নাই। হেড অফিস থেকে নিতে বলছে।’
পরিচিত লোক থাকলে সংশোধনের কাজটাও অনেকে এ অফিস থেকে করিয়ে নিতে পারছেন। কিন্তু যাঁদের পরিচিত লোক নেই, তাঁরা ঘুরঘুর করে ফিরে যাচ্ছেন। ফারুক আহমেদ সায়েদাবাদে কার্ড করেছিলেন। ঠিকানায় ভুল আছে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর বলেছে দুই মাস লাগবে। তাই আগারগাঁওয়ে চলে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে জেনেছেন, সংশোধন করতে হবে নিজ এলাকা থেকেই।
নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রজেক্টের সহকারী পরিচালক ফারহানা বেগম স্থানীয় অফিসে কার্ড পাওয়ার ভোগান্তি নিয়ে বলেন, ‘মানুষ ধৈর্য ধরতে চায় না। কিছু কিছু তথ্য পরিবর্তনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের (ভেরিফিকেশন) দরকার হয়। তখন সময় লাগে। এ জন্যই দেরি হয়।’ তিনি আরও বলেন, আগে এ অফিসে অনেক ভিড় হতো। মানুষের ভোগান্তি কমাতেই সংশোধন-প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া কার্ড দ্রুত তোলাসহ এখানে এখন জরুরি সেবা পাওয়া যায়।
তবে জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে ইটিআই থেকে খুব দ্রুতই তা তোলা যায়। কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের কার্ড হারিয়েছে। থানা থেকে জিডির কপি নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমার রসিদ জমা দিয়েছেন। ঘণ্টা খানেকের মতো অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাঁর পাশে বসে থাকা কয়েকজন বললেন, কার্ড হয়ে গেলে মোবাইলে এসএমএস চলে আসে। দিনে দিনেই হারিয়ে যাওয়া কার্ড তোলা যায়। ঝামেলা পোহাতে হয় না।