তড়িঘড়ি করে ঘ ইউনিটের ফল প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেই তড়িঘড়ি করে ফল প্রকাশ করল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, ফল প্রকাশের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করলে ঘোষণার এক ঘণ্টা পর ফল প্রকাশ করা হয়। এ সময় একাধিক সংবাদকর্মীকে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দুদিনের মাথায় আজ রোববার বেলা দেড়টায় ফল প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, দেড়টায় কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যালয়ে ফল প্রকাশ করা হবে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দুটি অংশ। মিছিলগুলো মধুর ক্যানটিনে এলে সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে পুনরায় মিছিল করেন। মিছিলটি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন ও কলা ভবন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে যায়। সেখানে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকার আগে দুটি কলাপসিবল ফটক পার হতে হয়। দুটিতেই তালা দেওয়া ছিল। দুটি তালা ভেঙে নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের কক্ষের দরজার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব, ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী বাসদ সমর্থিত) সভাপতি নাঈমা খালেদ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান নেওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। একই সময়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে অন্য একটি দরজা দিয়ে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন।
কিছুক্ষণ পর উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন ও পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, তদন্ত না করে ফল প্রকাশ করা যাবে না।

উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে। ডিভাইসের মাধ্যমে যাঁরা জালিয়াতি করেছেন, তাঁদেরও ধরা হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার খবর শুনি। এর আগ পর্যন্ত আমরা বিষয়টি শুনিনি। পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষা চলাকালেও যদি এমন জানা যেত, তবে আমাদের সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতো। এখন এ অভিযোগ আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা দু-তিন ঘণ্টা পর এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। বরং কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি যে ছাত্রদের উসকে দেওয়া হচ্ছে, এর কতগুলো প্রমাণও পেয়েছি। রাতে ই-মেইল করেছে কারা, যারা এ রকম জাতির এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কেননা প্রশ্নটি ফাঁস হয়নি, প্রশ্নটি আউট হয়েছে ১০টার পরে, তখন শিক্ষার্থীদের হাতে তা চলে গেছে। গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রশ্নটিতে কিছু করা হয়েছে। এই প্রশ্নটি, পরীক্ষা হলে থেকে সাম হাউ আমরা প্রশ্ন যখন বিতরণ করেছি তারপর। এটা প্রভাব পরীক্ষার ফলাফলের কোথাও পড়েনি। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার জন্য এ ধরনের রিপোর্টে পরীক্ষা বাতিল করতে পারি না।’

উপাচার্যের এ বক্তব্যে বিক্ষোভকারীরা ‘শেম’ ‘শেম’ বলে ওঠেন। বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। উপাচার্য কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যালয়ে ফল প্রকাশ করতে চলে যান। পরে বিক্ষোভকারীরাও সেখান থেকে চলে যান। সবাই চলে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত একাধিক সংবাদকর্মী অভিযোগ করেন, সহকারী প্রক্টর সোহেল রানা সংবাদকর্মীদের দিকে মুঠোফোন তাক করে ভিডিও করছিলেন। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মীর আরশাদুল হক তাঁদেরকে ভিডিও করার কারণ জানতে চান। তখন ওই সহকারী প্রক্টর তাঁর কাছে পরিচয়পত্র চান। পরিচয়পত্র দেখানোর পর তাঁকে উপাচার্যের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন ও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

খবর পেয়ে অন্য সংবাদকর্মীরা এসে তাঁকে উপাচার্যের দপ্তর থেকে ছাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে যান। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে ফল প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, ৯৮ হাজার ৫৬ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৭১ হাজার ৫৪৯ জন অংশ নিয়েছিলেন। ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে পাস করেছেন ১০ হাজার ২৬৪ জন। পাসের হার ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই ইউনিটের অধীন পরীক্ষায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ১৪৭ টি, ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ৪১০টি ও মানবিক শাখার জন্য ৫৩টি আসন রয়েছে। বিস্তারিত ফল জানা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (admission.eis.du.ac.bd)। যেকোনো অপারেটরের মোবাইল ফোন থেকে DU স্পেস GHA স্পেস রোল নম্বর লিখে ১৬৩২১ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও জানা যাবে।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। আর ফল প্রকাশ করা হয় ১৮ অক্টোবর। ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা হয় ২২ সেপ্টেম্বর, ফল প্রকাশ করা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। আর ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আর ফল প্রকাশ করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। পাঁচটি ইউনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ‘ক’ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ছিলেন ৫০ জন পরীক্ষার্থী। ‘খ’ ইউনিটে ১৩, ‘গ’ ইউনিটে ২৩ জন করে প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে ‘ঘ’ ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষা দিয়েছেন ৬১ জন। মোট আবেদন করেছিলেন ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ