আলুর উল্টোযাত্রা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মৌসুমের শেষ দিকে এসে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে। বাজারের এ স্বাভাবিক প্রবণতা এবার আলুর ক্ষেত্রে খাটছে না। মৌসুম শেষে কমছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম যখন ৬০ টাকা কেজির বেশি, তখন আলু মিলছে মাত্র ২০ টাকা কেজিতে।
আলুর এ উল্টোযাত্রার কারণ বিপুল উৎপাদন। বিপরীতে বাজারে চাহিদা কম থাকা এবং নগণ্য পরিমাণে রপ্তানি। হিমাগারের মালিকেরা দাবি করছেন, হিমাগারে রাখা আলু বিক্রির জন্য সময় হাতে আছে মাত্র দেড় মাস। কিন্তু এখনো হিমাগারগুলোতে প্রায় ৬০ শতাংশ আলু রয়ে গেছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কৃষক ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছেন না।
ঢাকার খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর দাম জাত ও মানভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কারওয়ান বাজারের আড়তে সবচেয়ে ভালো মানের আলু মিলছে সাড়ে ১২ টাকা কেজিতে। পাইকারি দোকানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম প্রায় ১৫ কেজি আলুর মূল্যের সমান।
বাজারে নতুন মৌসুমের আলু উঠতে শুরু করে ডিসেম্বর থেকে। মার্চ মাসে আলু হিমাগারে রাখা শেষ হয়। কৃষকের ঘরে থাকা তাজা আলু প্রতিবছর কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। হিমাগারের আলু এলে তা কেজিপ্রতি ২৫ টাকা হয়। কয়েক বছর ধরে মৌসুমের শেষ দিকে এসে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকায় ওঠে। এ বছর কমছে।
উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি হিমাগারের মালিক বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, মৌসুমের শুরুতে এক বস্তা ভালো মানের আলু কেনা ও তা হিমাগারে রাখতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো। একই আলু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ টাকায়। প্রতি বস্তায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান প্রায় ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, গত বছর আলু আবাদ করে কৃষকদের একটু লাভ হয়েছিল। ফলে এ বছর আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। নতুন আলু উঠলে প্রায় ২০ লাখ টনের মতো হিমাগারে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
উৎপাদন বাড়ছে
দেশে আলু উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৮৬ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এরপর প্রতিবছর তা প্রায় ৩ লাখ টন করে বাড়ছে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের উৎপাদনের হিসাব এখনো অনুমোদিত হয়নি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, তারা হিসাব চূড়ান্ত করেছে, যা পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তাদের হিসাবে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি টন। বিগত অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছিল ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার টন আলু।
হিমাগারের মালিকেরা মনে করেন, বছরে উৎপাদন ৮০ থেকে ৮২ লাখ টনের মধ্যে থাকলে বাজারও স্থিতিশীল থাকে এবং আলু নিয়ে সংকটও হয় না।
রপ্তানি আয় নগণ্য
দেশে বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদিত হলেও রপ্তানি আয় নগণ্য। এমনকি কয়েক বছর আগে আলু রপ্তানি করে যে আয় হতো, তা এখন অর্ধেকের নিচে নেমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আলু রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অবশ্য এ আয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় বেশি। ওই বছর আয় হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, আলু সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে মালয়েশিয়ায়। দেশটিতে প্রায় ৮৩ লাখ ডলারের আলু রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকেরা। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ব্রুনেই, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আলু রপ্তানি হয়েছে।
আলু রপ্তানিতে সরকার কয়েক বছর ধরে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু ২০১৬ সালে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এ বছর আবার নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী জাতের অভাবে দেশের আলু রপ্তানি বাড়ছে না। আমরা রপ্তানি বাজারের উপযোগী কিছু জাত ছাড় করার বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কম। এ ছাড়া কৃষকেরাও নতুন জাত গ্রহণ করতে চান না।’ তিনি বলেন, রপ্তানি বাজারের উপযোগী হিসেবে বাংলাদেশে গ্রানুলা জাতের আলু আবাদ হয়। বিশ্ববাজারে এর দাম খুব কম।
শেখ আবদুল কাদের আরও বলেন, গত বছর আলু রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে রপ্তানি কমে যায়। এ সমস্যাটির সমাধান হয়েছে।