ফাঁসের কথা আগের রাতেই জেনেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শুক্রবার ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্ন ফাঁসের কথা জানতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তাঁর উপস্থিতিতে পুলিশ অমর একুশে হলের ছাত্রলীগের একজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি জানতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় করা সিআইডির মামলার এজাহারে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

পরীক্ষার আগে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে আসছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলও ঘোষণা করেছে।

পরীক্ষার আগের দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক মহিউদ্দীন রানা এবং অমর একুশে হলের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরদিন পরীক্ষার হল থেকে এক পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার রাতেই সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে অমর একুশে হলে আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাই এবং হলের হাউস টিউটর মাহিদুল হক প্রধানের সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে মামুনকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে স্বীকার করেন। তাঁর কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপে বিভিন্ন ব্যক্তির আইডিতে প্রশ্নপত্র প্রেরণের ছবি, প্রবেশপত্র ও রোল নম্বর পাওয়া যায়। তাঁরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে এই কাজে জড়িত। তাঁর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমীর, মিজান, আজাদ, ওমেগা কোচিংয়ের তন্ময়, মাইলস্টোন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সুব্রত জড়িত।’

জানতে চাইলে অমর একুশে হলের হাউস টিউটর মাহিদুল হক প্রধান মুঠোফোনে বলেন, হলে অভিযানের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সিআইডি ও প্রক্টোরিয়াল টিম আব্দুল্লাহ আল মামুনের মুঠোফোনটি জব্দ করেছে। সেটা তিনি দেখেছেন। তবে ওই মোবাইল ফোনে কী ছিল, তা সিআইডি ও প্রক্টোরিয়াল টিম ভালো বলতে পারবে।

জিজ্ঞাসাবাদে মামুনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করার বিষয়ে মাহিদুল হক বলেন, ‘যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয়, আপনারা সিআইডির কাছেই জানতে চান। এ বিষয়ে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না।’

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ‘আসামিদের হেফাজতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিল, বিকেএসপিতে চাকরিরত অলিপ কুমার বিশ্বাস, তার (অলিপের) ছোট ভাই উৎপল এবং জেনিথ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানায়। আসামি রানা উৎপলের কাছ থেকে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস সংগ্রহ করে এবং জেনিথ তাদের গ্রাহক (ক্লায়েন্ট) জোগাড় করে দেয়।’

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্নপত্র জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা হচ্ছেন অলিপ বিশ্বাস। বিকেএসপির এই সহকারী পরিচালক মূলত ইলেকট্রনিকস ডিভাইস সরবরাহ করতেন। তাঁকে পরীক্ষার্থী সরবরাহ করতেন তাঁর পরিচিত কিছু ছোট ভাই। অলিপ ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। কলেজে থাকাকালীন তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরীক্ষার্থীদের কাছে সংগৃহীত টাকা তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর একটি রসিদও পাওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, অলিপ গা ঢাকা দিয়েছেন। পুরো চক্রটির হদিস জানেন তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছুর রহমান বলেন, অলিপ গত শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন। কেউ যদি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চায়, আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে তাঁরা সহায়তা করবেন।

 

তদন্তের দাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের

‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগে এই ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী প্রমুখ। দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করবে এই জোট।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ