তিক্ততা ভুলে রানীর পাশে বচ্চন পরিবার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রানী মুখার্জির বাবা রাম মুখার্জি রোববার ভোরে রক্তচাপজনিত কারণে মারা গেছেন। রাম মুখার্জি টালিউড ও বলিউডের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। বলিউড তারকা রানীর চলচ্চিত্রে অভিষেকও নির্মাতা বাবার হাত ধরে। গতকাল বুধবার মুম্বাইয়ের জুহু এলাকার ইস্কন মন্দিরে রাম মুখার্জির পরিবারের পক্ষ থেকে একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে রানী ও তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বলিউডের তারকা মহলের অনেকে হাজির হয়েছিলেন। এসেছিলেন বচ্চন পরিবারের সদস্যরাও। অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন প্রার্থনা অনুষ্ঠানে রানীর সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছেন। ইন্টারনেটে সেই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
বচ্চন পরিবারের সঙ্গে রানী মুখার্জির সম্পর্কটা অনেক পুরোনো ও গভীর। ‘বান্টি অউর বাবলি’, ‘যুবা’, ‘বাস ইতনা সা খোয়াব হ্যায়’, ‘লাগা চুনারি মে দাগ’, ‘কাভি আল ভিদা না কেহনা’সহ বেশ কিছু ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন রানী ও অভিষেক। কাজ করতে করতে জুনিয়র বচ্চনের প্রেমে পড়ে যান রানী। সেই প্রেমে অভিষেকের যে একেবারে সায় ছিল না, তা নয়। গুঞ্জন শোনা যায়, ছেলের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ান মা জয়া বচ্চন। কড়া স্বভাবের জয়া নাকি রানীর সঙ্গে অভিষেকের মেলামেশা একদম পছন্দ করতেন না। রানীকে অপমানজনক অনেক কথাও নাকি বলেছিলেন তিনি।
অবশ্য অমিতাভ বচ্চন রানীকে মেয়ের মতো স্নেহ করতেন, এখনো করেন। ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে ছাত্রী-শিক্ষক আর ‘বাবুল’ ও ‘কাভি আল বিদা না কেহনা’তে পুত্রবধূ ও শ্বশুরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রানী-অমিতাভ। বাস্তবে দুই শিল্পীর শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক ক্যামেরার সামনের অভিনয়ের কাজটাকেও সহজ করে দিয়েছিল। অনেক বছর পর এ বছরের এপ্রিল মাসে অমিতাভ ও রানীর পুনর্মিলনী হয় একটি শুটিং সেটে। রানী তখন আসন্ন ছবি ‘হিঁচকি’-এর শুটিং করছিলেন। পাশের সেটেই আরেকটি প্রডাকশনের কাজ করছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেখানে রানী আছেন জানতে পেরে অনুজ এই সহশিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে নিজেই ছুটে গিয়েছিলেন অমিতাভ। সে সময় ‘বিগ বি’কে দেখে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হন রানী। কিছু সময়ের জন্য যেন তাঁরা অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন।
অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়েতে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলেন রানী। শাহরুখ খানের ‘চালতে চালতে’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রে ঐশ্বরিয়াকে বাদ দিয়ে রানীকে নেওয়ার পর থেকেই দুজনের সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ে। রানীর মন ভেঙে তাঁর শত্রুর সঙ্গেই যে অভিষেক গাঁটছড়া বাঁধবেন, তা রানী মেনে নিতে পারেননি। ‘অভি-অ্যাশ’-এর বিয়ের পর রানী মিডিয়া থেকে কিছুদিনের জন্য নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন। সে সময় রানীর কয়েকটি সাক্ষাৎকারের অসংলগ্ন কথাবার্তায় এ অভিনেত্রীর তখনকার মানসিক অবস্থা কিছুটা আঁচ করা যায়।
এরপর থেকে বচ্চন পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গেই কাজ করেননি রানী। অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ের কয়েক বছর পর বিবাহিত নির্মাতা আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে প্রেম শুরু করেন রানী মুখার্জি। অনেকে মনে করেন, আদিত্যর সঙ্গে রানীর সম্পর্কটি প্রেমের চেয়ে বেশি জেদের। বলিউডের বিখ্যাত তারকা পরিবার বচ্চন পরিবারের বধূ হতে না পেরে নাকি তিনি যশ চোপড়ার পুত্রবধূ হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন। এগুলো অবশ্য মানুষের অনুমান। এর কোনটি কতটুকু সত্যি, সেটা তারাই ভালো জানেন। তবে, অভিষেকের প্রতি রানীর দুর্বলতা ও তাঁর বিয়ের পর এই নায়িকার হৃদয় ভেঙে যাওয়ার কথা মোটেও মিথ্যা নয়।
গতকাল দীর্ঘ ১০ বছর পর রানীর সঙ্গে অভিষেকের দেখা হলো, কথা হলো তাঁর বাবার মৃত্যু-পরবর্তী প্রার্থনা অনুষ্ঠানে। এদিন ঐশ্বরিয়াও দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন রানীর সঙ্গে তাঁর অতীতের সব তিক্ত স্মৃতি।