মেয়র বললেন না
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রস্তাবিত গৃহকর নিয়ে চট্টগ্রামের মেয়রের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কোনো সমঝোতা হয়নি। বৈঠকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মেয়রকে দুটি প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়র আইনি কাঠামোর বাইরে যাবেন না বলে তাঁদের জানিয়ে দেন। দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় গৃহকরের হার কমানো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে মেয়রের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতার এই বৈঠক হয়। মেয়র নিজেও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে প্রস্তাবিত গৃহকর নিয়ে নগর কমিটির সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ দলের বড় একটি অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি।
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বৈঠক শেষ হওয়ার পর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) নিয়ে যেভাবে কথাবার্তা হচ্ছে, তাতে আসলে চিল কান নিয়ে যাচ্ছে বলা হচ্ছে। চিলের পেছনে দৌড়ালে হবে না, হাত দিয়ে দেখতে হবে কানটা আছে কি না। এখানে (বৈঠকে) অনেককে দেখলাম, কান যে আছে সেটা তাঁরা হাত দিয়ে দেখছেন না।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, এবার টানা বৃষ্টির হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এ জন্য গৃহকরের হার না বাড়াতে তাঁরা দুটি প্রস্তাব দেন। নতুন পদ্ধতিতে গৃহকর আদায়ের সিদ্ধান্ত দুই বছরের জন্য স্থগিত করা বা আগের নিয়মে গৃহকর নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তাঁরা। কিন্তু মেয়র আইনি কাঠামোর বাইরে যাবেন না বলে তাঁদের জানিয়ে দেন। এখন পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে নগর কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর আদায় করা হতো। বর্তমান মেয়র নাছির আগামী ১ জানুয়ারি থেকে স্থাপনার আয়তনের পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায় করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে করের হার একই থাকবে। কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবি, নতুন নিয়মে গৃহকর আদায় করলে আগের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি কর দিতে হবে। এতে চাপে পড়বেন বাড়ির মালিকেরা। এর প্রভাব ভাড়াটেদের ওপরও পড়বে।
বৈঠকে অংশ নেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের চার সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, আইনবিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শেষ পর্যন্ত মেয়র বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন বলে আশা করছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, মানুষকে বাড়তি করের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে হবে।
এ বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট (গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন) আগেও হয়েছে। সাবেক মেয়ররা করেছেন। অ্যাসেসমেন্টের কারণে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে কিংবা কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে বা অতিরঞ্জিত কিছু হলে সেগুলোর জন্য আপিলের ব্যবস্থা রয়েছে। আপিলে কেউ সন্তুষ্ট না হলে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে তিনি বলেন, জনগণ যাতে অসন্তুষ্ট না হয়, সেদিকে তিনি সজাগ রয়েছেন।
প্রস্তাবিত গৃহকরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ, আওয়ামী লীগের একাংশ, বিএনপি, নাগরিক ফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। করদাতা সুরক্ষা পরিষদ গত ১৫ দিনে চট্টগ্রাম নগরের ১৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয় ঘেরাওয়ের পাশাপাশি বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
গৃহকর নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সম্প্রতি মেয়র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এদিকে গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ধিত গৃহকর নিয়ে গণ-অসন্তোষ ধূমায়িত হয়েছে। এই সমস্যার সম্মানজনক নিষ্পত্তি না হলে দল ও সরকার বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে বর্ধিত গৃহকর নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া জুলুমের শামিল। এটা জনস্বার্থের পরিপন্থী।