বাড়ছে প্রি-পেইড মিটার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিদ্যুতের গ্রাহক পরিষেবায় এক নতুন ধারার সূচনা করেছে ‘প্রি-পেইড মিটার’। ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫ লাখেরও বেশি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখে উন্নীত হবে।
সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিদ্যুৎ গ্রাহককে এই পরিষেবায় যুক্ত করা। সেই লক্ষ্যে ২০২০-২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। তবে এখনই দেশে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক ২ কোটি ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। তা ছাড়া প্রতিদিন এই সংখ্যা আরও বাড়ছে।
প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রমটি সমন্বয় করছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি-সহায়তা সংস্থা—পাওয়ার সেল। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, যে গ্রাহকদের মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ৫০ ইউনিটের মধ্যে অর্থাৎ যাঁরা লাইফ লাইন গ্রাহক, তাঁদের প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হচ্ছে না। এই সংখ্যা এখনই প্রায় ৫০ লাখ। এরপর অবশ্য সব ধরনের গ্রাহকই ক্রমান্বয়ে বাড়বে। যেসব এলাকায় নেটওয়ার্ক তৈরি হবে, সেখানকার গ্রাহকেরা নিজেরা কিনেও প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করতে পারবেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা অনেক। গ্রাহক রিচার্জ কার্ড ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজনমতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোও বিদ্যুৎ সরবরাহের আগেই বিল পাবে, যা এখন পায় প্রায় দুই মাস পর। বিল নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ও হয়রানির অবসান হবে।
প্রি-পেইড মিটারে কোনো গ্রাহক তাঁর জন্য অনুমোদিত পরিমাণের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন না। বেশি ব্যবহার করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে যেকোনো গ্রাহক চাইলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ (লোড) বিতরণ কোম্পানি থেকে বাড়িয়ে নিতে পারবেন। প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহক যত টাকা রিচার্জ করবেন, তত টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে বন্ধ হওয়ার আগে গ্রাহকের মিটার সংকেত দেবে, যা দেখে গ্রাহক রিচার্জ করতে পারবেন। অবশ্য কোনো গ্রাহকের রিচার্জ বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ হয়ে গেলে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে না। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় রিচার্জ করা সম্ভব হবে না বলে মিটারে এই ‘ফ্রেন্ডলি আওয়ার’ রাখা হয়েছে। ফ্রেন্ডলি আওয়ার শেষে গ্রাহক যখন রিচার্জ করবেন, তখন বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রোববার রিচার্জ করার আগে পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল সমন্বয় হয়ে যাবে।
আপাতত প্রি-পেইড মিটারে কার্ড রিচার্জ করতে হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের শাখা থেকে। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, বিশেষ করে ঢাকায় রিচার্জ করার জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইন দিতে হচ্ছে। তা ছাড়া কমিশন কম পায় বলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলো প্রি-পেইড মিটার রিচার্জের জন্য ডেস্কের সংখ্যা সীমিত রাখছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, মিটারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকে রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় ডিপিডিসির আওতাধীন লালবাগ এলাকায় ইতিমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে। ডিপিডিসির সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটার লাগানোর পর লালবাগ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। কারণ প্রথমত, গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে নজর রাখছেন। দ্বিতীয়ত, অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণও করতে পারে।
সব গ্রাহককে বিতরণ কোম্পানিগুলোই মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের (সিঙ্গেল ফেজ) প্রতিটি মিটারের দাম পড়ছে আড়াই হাজার টাকার মতো। এই টাকা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে কেটে নিয়ে সমন্বয় করা হবে। আর শিল্প, বাণিজ্য ও বড় গ্রাহকের ব্যবহারের (থ্রি ফেজ) প্রতিটি মিটারের দাম পড়ছে ১২ হাজার টাকার মতো। এসব মিটারের দাম সমন্বয়ের জন্য প্রতি মাসে কিছু বেশি টাকা নেওয়া হবে।
কোনো মিটার নষ্ট হলে বা সমস্যা করলে বিতরণ কোম্পানিই তা পরিবর্তন করে দেবে। এ জন্য আলাদা কোনো টাকা দিতে হবে না। আর তিন বছর পর্যন্ত প্রতিটি মিটারের জন্য নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) থাকবে। এরপরও প্রয়োজনে যেকোনো সেবা দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানি। কোনো গ্রাহক চাইলে বাজার থেকে নিজে মিটার কিনেও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মিটার কিনে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিকে দিতে হবে। তারা বিনা খরচে সেই মিটার পরীক্ষা করে স্থাপন করে দেবে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১০ লাখ ৬০ হাজার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৩১ লাখ, ডিপিডিসি ১০ লাখ, ডেসকো ৫ লাখ, পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ৫ লাখ, উত্তরাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (নওজোপাডিকো) ৬ লাখ প্রি-পেইড মিটার লাগাবে। ইতিমধ্যে যে ৫ লক্ষাধিক লাগানো হয়েছে এগুলো তার বাইরে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিডিবির বিতরণ এলাকায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১২টি, আরইবির এলাকায় ২০ হাজার ৫০০, ডিপিডিসির এলাকায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭২, ডেসকোর এলাকায় ৮৪ হাজার ৯২২, ওজোপাডিকোর এলাকায় ৬১ হাজার ৪১৭ এবং নওজোপাডিকোর এলাকায় ১৮ হাজার ৮৯৪টি প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১০০টি সিঙ্গেল ফেজ এবং ২১ হাজার ৩১৭টি থ্রি ফেজ। প্রতিদিনই প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। ডেসকো এলাকায় আরও একধাপ এগিয়ে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার লাগানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্য কোম্পানিগুলোও স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার লাগাবে। তাতে ইতিমধ্যে লাগানো মিটার ব্যবহারে কোনো অসুবিধা হবে না। স্মার্ট মিটারে কিছু বেশি সুবিধা থাকবে।