আইএস না থাকায় বিয়েতে ধুমধাম !
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাড়ির ভেতর গোল হয়ে দাঁড়িয়ে গান গাইছিলেন কয়েকজন নারী। অন্যদিকে উঠোনে নারী ও পুরুষেরা হাত ধরাধরি করে নাচছিলেন। কনের মুখে ছিল গাঢ় মেকআপ। আর গলায় ছিল কাগজের মুদ্রার তৈরি মালা। আইএস মুক্ত হওয়ার পর সিরিয়ার রাকা শহরে আয়োজিত প্রথম বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবেই আনন্দ করছিল শহরবাসী। অথচ কয়েক মাস আগেও রাকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ছিল।
রাকা শহর যত দিন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দখলে ছিল, তত দিন বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গাওয়া বা নাচের কোনো সুযোগই ছিল না। নারীদের রূপসজ্জা ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শহরটির কয়েকজন অধিবাসী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, গত শুক্রবার রাকার পশ্চিমাঞ্চলের জাজরা এলাকায় আহমদ ও হেবা নামের দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ে হয়। আইএসের দখলমুক্ত হওয়ার পর এই প্রথম রাকা শহরে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান ধুমধামের সঙ্গে উদ্যাপিত হলো। বিয়ের দিন শহরের অধিবাসীরা কম-বেশি সবাই এই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গত ১৭ অক্টোবর মার্কিন সহায়তাপুষ্ট সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স আইএসকে হটিয়ে রাকা দখল করে। এর আগে প্রায় তিন বছর আইএস শাসন করেছে শহরটি। চার মাস ধরে যুদ্ধ চলার পর আইএস পরাজিত হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকেই নাচছিলেন। শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছিল চারদিকে। এ সময় কাছেই বসে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের মুখে ছিল সম্মতির হাসি। ১৮ বছরের আহমদের পরনে ঐতিহ্যবাহী বাদামি রঙের পোশাক। অন্যদিকে নববধূ হেবার পরনে ছিল সাদা রঙের বিয়ের পোশাক।
আইএস গান ও নাচ নিষিদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া পোশাকের ব্যাপারে ছিল কড়াকড়ি। ওই সময় নারীরা মুখে কোনো মেকআপ করতে পারতেন না। আর নারী-পুরুষের মেলামেশা ছিল কল্পনারও বাইরে। কিন্তু গত শুক্রবার জাজরার বিয়ের অনুষ্ঠানে সব নিষিদ্ধের বেড়াজাল ভেঙে বেরিয়ে আসেন রাকার অধিবাসীরা।
আহমদের বাবা উথমান ইব্রাহিম ব্যস্ত ছিলেন অতিথিদের অভিবাদন জানানোর কাজে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি। জিহাদিরা চলে যাওয়ার এটিই এখানকার প্রথম বিয়ে। আইএস আসার আগে নাচে-গানে খুব ধুমধাম করে আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান করতাম। আইএস সব নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। আজ আনন্দ ফিরে আসার দিন।’
আইএস আমলে নারীদের কালো পোশাক পরতে বাধ্য করা হতো। সেই অবগুণ্ঠন ছেড়ে আহমেদ ও হেবার বিয়েতে সব নারী অতিথিরা এসেছেন নানা রঙের পোশাক। তাঁদের ঠোঁটে ছিল লাল রঙের লিপস্টিক।
নব দম্পতিকে ঘিরে ধরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন অনেকে। কেউ কেউ আবার মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। বরের বোন উম আহমেদ (২৫) বলেন, ‘অনেক দিন পর এমন একটি পার্টিতে আমরা সবাই এক হলাম। আইএসের শাসন শেষ হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে আমরা আনন্দ করলাম। কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন উম আহমদের মুখে ছিল প্রাণখোলা হাসি। তাতে খুশি যতটা ছিল, ঠিক ততটাই ছিল স্বস্তি।