চাওয়া হবে হাথুরুর জবাবদিহি ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: তাহলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে দিয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! নাসির হোসেনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা নেই। মুমিনুল হকের যোগ্যতা নেই টেস্টের বাইরে কিছু খেলার। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ চলাকালেই নাকি কোচ দলের মধ্যে এই মত প্রকাশ করেছেন।
সেটির প্রতিফলনও দেখা গেছে। পুরো সফরে দলের সঙ্গে রেখে দিলেও টেস্ট সিরিজের পর মুমিনুলকে আর কোনো কিছুর জন্যই বিবেচনা করা হয়নি। আর নাসির তো ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। একজন কোচ এ রকম সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। তাঁর মনে হতেই পারে অমুক ক্রিকেটারকে দিয়ে হবে, তমুককে দিয়ে হবে না। কিন্তু এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যদি সেই কোচ শুধু নিজের অভিজ্ঞতার মধ্যে থাকা নিকট অতীতটাই দেখেন, তাহলে তাঁর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একজন ক্রিকেটার খারাপ সময়ে পড়লে তাঁর সমস্যা দূর না করে ‘অমুক চলে না’, ‘তমুক পারে না’–জাতীয় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে বিদেশি কোচ লাগে না। এ রকম ‘ক্রিকেটবোদ্ধা’ বাংলাদেশে ১৬ কোটি আছে।
হাথুরু বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগেও নাসির, মুমিনুল কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এবং সেগুলোয় ভালোও করেছেন। পরিসংখ্যানপ্রিয় হাথুরুসিংহে তো পারেন সেই পাতাগুলোও ওলটাতে। একজন খেলোয়াড়ের খারাপ সময় গেলে কোচেরই দায়িত্ব তাঁকে ফর্ম ফিরে পেতে সাহায্য করা। হাথুরুসিংহে কি তা করছেন? দলের অন্দরমহল থেকে অন্তত সে রকম কোনো খবর নেই। বাজে সময়ের মধ্যে থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বরং তাঁর রূঢ় আচরণেরই অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। সে জন্য অপমানিত হওয়ার ভয়েও অনেক খেলোয়াড় কোচের সাহায্য চাইতে যান না।
আর যদি কোচ কাউকে সাহায্য করেও থাকেন, তাহলে ওই খেলোয়াড়দের সমস্যা সমাধানে তাঁকে ব্যর্থই বলা যায়। নইলে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা ছাড়া দলে এখনো নির্ভর করার মতো আর কেউ নেই কেন? এখন হাথুরুসিংহে নিশ্চয়ই বলবেন না সাকিব-তামিম-মুশফিকেরা তাঁরই সৃষ্টি!
বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় সাড়ে তিন বছরে হাথুরুসিংহের অবদান আসলে কিছুই নয়। তিনি যদি পারতেন সৌম্য সরকারের ব্যাটে ধারাবাহিকতা ফেরাতে, নাসিরকে আগের মতো নির্ভার ক্রিকেট খেলায় উজ্জীবিত করতে, টেস্ট সামর্থ্যের সঙ্গে মুমিনুলের ব্যাটিংয়ে ওয়ানডের মেজাজটাও আনতে (যেটা মুমিনুলের নেই বলেই মনে করেন হাথুরুসিংহে), তাহলেই বলা যেত বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য তিনি কিছু করেছেন। এই সাড়ে তিন বছর থেকে হাথুরুসিংহে এমন একটি উদাহরণ তুলে আনতে পারবেন না, যেটা দিয়ে বাংলাদেশের সাফল্যে তাঁর অবদান প্রমাণিত হবে। এমন একজন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাঁকে দেখিয়ে কোচ দাবি করতে পারেন, ‘অমুকের সমস্যার সমাধান তো আমি করেছি।’
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কান এই কোচের অনেক সিদ্ধান্তই মুখ বুজে মেনে নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। মুশফিকুর রহিমকে একটা স্থিতিশীল জায়গা থেকে নাড়িয়ে দেওয়া, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে সরে যেতে চাপ সৃষ্টি করা এবং মুমিনুল হককে প্রায় অকেজো বানিয়ে ফেলা—বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত এগুলোই হাথুরুসিংহের দৃশ্যমান ছাপ।
অথচ কী বিস্ময়কর, এসব নিয়ে জবাবদিহির কোনো ধারই ধারেন না তিনি! দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে কোচ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন শুধু প্রথম টেস্টের আগের দিন। এরপর সাংবাদিকেরা একাধিকবার চেয়েও কোচের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি। দল খারাপ খেলে, আর রাজ্যের প্রশ্নের মুখে পড়েন শুধু অধিনায়ক-খেলোয়াড়েরা। এ রকম সময়ে বড় কোচরা সাধারণত খেলোয়াড়দের তোপের মুখ থেকে বাঁচিয়ে নিজেরাই সংবাদ সম্মেলনের উত্তপ্ত চেয়ারে বসেন। অথচ দলের পারফরম্যান্স খারাপ দেখে হাথুরুসিংহে নিজে থাকছেন নিরাপদ দূরত্বে।
এই সিরিজে যখনই সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুসিংহেকে চাওয়া হয়েছে, ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীন একটা কথাই বলেছেন, ‘কোচ কথা বলতে চান না।’ কিন্তু কোচের বিরুদ্ধে যে এত অভিযোগ, সেসব ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যাও তো জানা উচিত। সেটা জানতেই প্রথম টি-টোয়েন্টির পর এই প্রতিবেদক হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। জবাবে হাথুরুসিংহে ধমকের সুরে বলে দেন, ম্যানেজার অনুমতি দিলেও তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন না।
ধরে নেওয়া যাক, এটাও কোচের একটা স্বাধীনতা। কিন্তু সংবাদমাধ্যম কোচকে কাছে না পেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তো পাবে। দলের সাফল্যে কোচদের পিঠ চাপড়ে দিতে কার্পণ্য করে না বিসিবি। এবার তাহলে ব্যর্থতার জবাবদিহি নেবে না কেন? অবশ্য বিসিবি সেটা চাইলে বিপদে পড়তে পারেন খেলোয়াড়েরাও।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা নিয়ে নাকি এবার হাথুরু বেশ কড়া একটা রিপোর্টই জমা দিতে যাচ্ছেন বোর্ডের কাছে !