দীর্ঘ মেয়াদে রোহিঙ্গা বোঝা বহন সম্ভব নয়: টিআইবি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের একার পক্ষে এই বোঝা বহন সম্ভব নয়। এ মন্তব্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বহনের দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারের ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি পরিচালিত ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে অবস্থানজনিত সমস্যা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক সমীক্ষা’র প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে জাতিগত নিধনের লক্ষ্যে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বাংলাদেশের একার নয়, বরং মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।’ তিনি বলেন, ক্ষমতাধর আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর স্বার্থে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনই মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে এ নৃশংসতার পথ অবলম্বনে উৎসাহিত করেছে। মিয়ানমারের এ হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ, বিশেষ করে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, উন্নয়ন, বাণিজ্য ও সামরিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। ফলে চলমান ব্যর্থতা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে যে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। বাংলাদেশের একার পক্ষে এ বোঝা বহনের সামর্থ্য নেই।
টিআইবি পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নিপীড়িত, নির্যাতিত ও নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ সত্ত্বেও তারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ বিশুদ্ধ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যজনিত ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয়ের ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকায় ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
সমীক্ষাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি ও উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সংকটের সুযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যোগসাজশ প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি রয়েছে। রোহিঙ্গা নারীদের যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে ফেলার ঝুঁকিসহ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে গেলে তা বহুমুখী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির কারণ হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতাকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ না করলে একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অবাধ সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্যও সমীক্ষায় পাওয়া গেছে।