নাফিসের ৩০ বছর জেল
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টার দায়ে বাংলাদেশি যুবক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক নাফিসকে ৩০ বছর কারাগারে থাকতে হবে।
নিউ ইয়র্কের আদালত শুক্রবার নাফিসের এই দণ্ডাদেশ ঘোষণা করে বলে বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে। ২২ বছর বয়সি নাফিস গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হলে সারাবিশ্বেই তা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।
নাফিস গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করলে তখনি বিচারক তার এই শাস্তির আভাস দিয়েছিলেন; যদিও পড়তে যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়া বাংলাদেশি এই যুবকের দাবি, তিনি পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।
দোষ স্বীকারের সময় বিচারক নাফিসকে বলেছিলেন, এক্ষেত্রে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও কোনো সুযোগ থাকবে না।
সব শুনেও নাফিস তখন স্বাভাবিক কণ্ঠে বলেছিলেন, তিনি বুঝেই দোষ স্বীকার করছেন।
এরপর নাফিসের মামলার রায়ের জন্য ৯ অগাস্ট দিন ঠিক করেন বিচারক, শুক্রবার সেই রায়ই হল।
এই রায়ের আগে কারাবন্দি নাফিস বিচারককে একটি চিঠি লিখে তাকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
চিঠিতে নাফিস লেখেন, তিনি একটি ‘বিরাট ভুল’ করেছিলেন এবং ওই সময় মানসিকভাবে বিপর্যন্ত ছিলেন তিনি।
নাফিস দাবি করেন, ছোটবেলার তোতলামির সমস্যা, লেখাপড়ায় ভাল করতে না পারা, ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও সফল হতে না পারা এবং মনের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের হতাশাই তাকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
নিজে কখনো ইসলামী জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেননি বলেও দাবি করেন নাফিস।
নিউ ইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক ক্যারল আমনকে গত ৩১ জুলাই নাফিসের পাঠানো ওই চিঠির একটি অনুলিপি রায়ের একদিন আগে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ।
নাটকীয় ওই চিঠিতে নাফিস লিখেছেন “প্রেমিকার প্রতারণায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর কোনো জায়গা নেই। বেঁচে থাকারও আর কোনো অর্থ নেই।”
এই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করতে পারতেন, কিন্তু ইসলামে নিষিদ্ধ বলে করেননি বলে চিঠিতে জানিয়েছেন এই বাংলাদেশি যুবক।
কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে বিচারকের অনুকম্পা চান তিনি।গত বছর জানুয়ারিতে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব মিসৌরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নাফিস। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে ওই কোর্স শেষ না করেই জুনের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে একটি টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআই জানায়, কথিত ‘স্টিং অপারেশনের’ মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর নাফিসকে গ্রেপ্তার করেছে তারা ।
নাফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, এই বাংলাদেশি যুবক এক হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার ভ্যানে ‘সত্যিকারের বিস্ফোরক’ না থাকায় সেটি আর ফাটেনি।
গত ১৫ নভেম্বর গ্র্যান্ড জুরি নাফিসের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন করে। এতে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্যে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা’ এবং ‘একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার চেষ্টার’ অভিযোগ আনা হয়। এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
নাফিস গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করে বলেন, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত তিনি তছনছ করে দিতে চেয়েছিলেন। আর এ লক্ষ্যেই তিনি বিস্ফোরকভর্তি ভ্যানের সাহায্যে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন।
নাফিস সেদিন আদালতে বলেন, শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেই তিনি ওসামা বিন লাদেনের অনুসারী হন এবং সন্ত্রাসী হামলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, জিহাদের নামে মানুষ হত্যা করা উচিত নয়।
এফবিআই গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় নাফিসের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার।