দাবি মানলে আন্দোলন করব না: খালেদা
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে ‘সবার জন্য সমান’ সুযোগ সৃষ্টি করা হলে বিএনপি আর আন্দোলন করবে না বলে জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
শুক্রবার দুপুরে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এখনো সময় আছে, দেশ ও জনগণকে যদি আপনারা ভালোবাসেন, তাহলে সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল পাস করে নির্বাচন দিন। আমরা আর আন্দোলন করব না। ওই নির্বাচনে যে ফলাফল হবে, তা মেনে নেব।”
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ঈদের পর এক দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন তারা।
খালেদা বলেন, “আমরা দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন চাই। বিএনপি বিভক্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই।”
খালেদা জিয়া আগের বছরগুলোতে ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।
কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বিরোধীদলীয় নেতা দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
অতিথিদের জর্দা, সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন তিনি।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ করে উন্নয়নের কথা বলার নামে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ চালাচ্ছে।
“গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষ কোনো উন্নয়নের সুফল পায়নি। সরকারকে বলব, মিথ্যা প্রচার বন্ধ করে সোজা পথে আসুন।”
বিদ্যুৎ খাতে সরকার ব্যাপক অগ্রগতির দাবি করলেও বিরোধী নেতা বলেন, “সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। শহরের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। গ্রামের মানুষও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।”
নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বিচার বিভাগ, জন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণ করে ফেলেছে।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘ব্যর্থ ও সরকারের আজ্ঞাবহ’ একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
“এর অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার যা বলে তারা সেইভাবে কাজ করে।”
বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চায় জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “তবে এর দায়িত্ব সরকারেরই। তাদের উচিৎ হবে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।”
দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে দেশের মানুষে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে রোজা ও ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। জনগণ দুঃসময়ের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। পদে পদে সরকারের ব্যর্থতার কারণে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।”
নির্বাচন সামনে রেখে নতুন প্রজন্মকেও নিজের পক্ষে ডেকেছেন খালেদা জিয়া।
“তোমরা আমাদের সঙ্গে এসো। তোমাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেব।”
লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমান এবং ব্যাংককে থাকা ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না– জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, “আমার পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে আছে- সেই বেদনা আছেই। তাদের সঙ্গে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিয়ম ও কথা হয়েছে।”
“আমি মনে করি- পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকলেও গোটা দেশের জনগণই আমার পরিবার। তাদের সঙ্গে আমি ঈদ করেছি,” সেই সঙ্গে বলেন তিনি।
খালেদার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ঢাকায় কূটনীতিক কোরের ডিন শাহের মোহাম্মদ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুশাইরী, পাকিস্তানের হাইকমিশনার আফরাসিয়াব হাশেমী মেহেদী কোরেশী, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরণসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিসহ ৪৭টি দেশের কূটনীতিক অংশ নেন।
পরে বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজারে মধ্যাহ্ন ভোজ দেয়া হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জাতীয় জামায়াতে ইসলামীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের. বিকল্প ধারার আবদুল মান্নান, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ রউফ, অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অধ্যাপক এ এস এম এ ফায়েজ, অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিনা বেগম, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, হাসনা জসীম উদদীন মওদুদ উপস্থিত ছিলেন।
কবি আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, আবদুল হাই শিকদার, চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চিত্রনায়ক আশরাফউদ্দিন উজ্জল, হেলাল খান, কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন, হাসান চৌধুরী, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সাংবাদিকদের নেতাদের মধ্যে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুস শহীদ, সাংবাদিক এম এ বাতেন, মাহফুজ উল্লাহও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
ব্যবসায়ী নেতা মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, আনিসুল হক, মোহাম্মদ আলী, আতিকুল ইসলাম বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে খালেদার পাশে ছিলেন বিএনপি নেতা আর এ গনি, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, এম মোরশেদ খান, আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারী রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাদেক হোসেন খোকা, রিয়াজ রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, আবদুল হালিম, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবীর খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নিতাই রায় চৌধুরী, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানাসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে খালেদা জিয়া তার স্বামী প্রয়াত জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেন। তিনি সেখানে দোয়া ও মোনাজাতও করেন।