সিডর এর সংগ্রাম চলছে

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার অনেক মানুষ ঠাঁই নিয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্রে। তাদেরই একজন চিলা গ্রামের জর্জি সরকার ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সাথী সরকার। অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে ওই দিন বিকেলে তাঁরা গিয়েছিলেন স্থানীয় সেন্ট মেরিস গির্জা-সংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সাথীর প্রসববেদনা। সকালের আলো ফোটার আগেই তাঁর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান।

ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার মধ্যে নতুন প্রাণের বারতা বয়ে আনল যে শিশুটি, মা-বাবা তার নাম রাখলেন সিডর। পুরো নাম সিডর সরকার। ঘূর্ণিঝড়ের ১০ বছরের সঙ্গে সঙ্গে সিডরও ১০ বছরে পা দিচ্ছে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। প্রকৃতির রুদ্ররোষ মাথায় নিয়ে যে শিশু পৃথিবীতে এসেছিল, তার সংগ্রাম এখনো চলছে। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলছে সিডর ও তার পরিবার।

উপকূলীয় আর ১০টি পরিবারের মতো নিদারুণ অভাব পিছু ছাড়েনি সিডরের পরিবারের। গত শনিবার সকালে চিলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সিডরের বাবা জর্জি সরকারের বসতভিটা পড়ে আছে, কোনো ঘর নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন, তাঁরা এখন আর এখানে থাকেন না। দেনার দায়ে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁরা এখন থাকেন গ্রামেরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

খুঁজতে খুঁজতে দেখা মিলল সিডরের দাদি রিভা সরকারের। তিনি নিয়ে গেলেন গোলপাতায় ছাওয়া ছোট্ট একটি ঘরের সামনে। বসতে দিলেন কাঠের পিঁড়িতে। বললেন, এই ছোট ঘর তাঁর চাচাতো বোন সুনীতা ঘোষের। দেনাগ্রস্ত পরিবারটিকে এখানে আশ্রয় না দিলে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকত না। এর মধ্যে হাজির হলেন সিডরের বাবা জর্জি সরকার। বললেন, গত বছর সিডরের দাদা রঞ্জিত সরকারের ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। মাস ছয়েক পরে তিনি মারা যান। এখন তাঁরা ঋণের জালে জর্জরিত। বাধ্য হয়েই তিনি ২৫ হাজার টাকায় থাকার ঘরটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এখন অন্যের কাছ থেকে নৌকা ধার করে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। সিডরের মা সাথী সরকার ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।

সাংবাদিক এসেছে শুনে সিডরকে বিদ্যালয় থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এক দৌড়ে সে বাড়িতে এল। প্রকৃতির মতোই দুরন্ত সে। ‘কেমন আছো’? একগাল হাসিতে উত্তর, ‘ভালো আছি’। পড়াশোনা কেমন হচ্ছে? ‘ভালো’। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করে না? হাসিমুখটা হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল। অভিমান ভরাউত্তর, ‘মা তো অনেক দূরে কাজ করে। আসতে তো পারে না।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ