বিএনপি আরও কর্মসূচি নিচ্ছে

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সড়কপথে কক্সবাজার সফর ও ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভার পর আরও মাঠের কর্মসূচি নিচ্ছে বিএনপি। দলীয়

সূত্রগুলো জানায়, এবার ঢাকার বাইরে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পরবর্তী কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া সড়কপথে সিলেট অথবা রাজশাহী যেতে পারেন।

জানা গেছে, ঢাকার বাইরের কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। আর আগস্টে বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তরাঞ্চলের অন্তত ১৫ জেলা। এ কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরবর্তী সফর এই দুই অঞ্চলে হতে পারে বলে দায়িত্বশীল নেতারা জানান।

অবশ্য দলের আরেকটি সূত্র জানায়, সরকারি নিপীড়নের শিকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়েও পরবর্তী কর্মসূচি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিগত আন্দোলনে রাজশাহী অঞ্চলে গুম, খুন হওয়া নেতাদের পরিবার নিয়ে জমায়েত করার কথাও ভাবনায় রাখা হয়েছে। ছয় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মাঠের এসব কর্মসূচি শেষ করতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ন, গত রোববার ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা, তার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর রাজনৈতিকভাবে ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বড় দুটি কর্মসূচি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি ‘মানবিক’ কর্মসূচিকে ঘিরে অনেক দিন পর নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে পেরেছে বিএনপি। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দীর্ঘ যাত্রাপথে নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তোলা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এই দুটি কর্মসূচিতে সরকারের ভেতরেও নাড়া পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সোমবার বলেন, ‘দুটি কর্মসূচিতে বিএনপির অনেক অর্জন। প্রথমত, জনসম্পৃক্ততা প্রকাশ পেয়েছে; দ্বিতীয়ত, নেতা-কর্মীদের মনোবল ফিরে পাওয়া; তৃতীয়ত, জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। আমরা মনে করি, এটা রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর মাঠের রাজনীতির সুযোগ পেয়ে নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। এখন নীতিনির্ধারকেরা চাইছেন আপাতত কোনো উত্তেজনাকর কর্মসূচিতে না গিয়ে একটি ‘অহিংস’ আন্দোলন গড়তে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মাঠপর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছাতে চান যে বিএনপি রাজনীতিতে একটি ‘গুণগত’ পরিবর্তন আনতে চায়। এ কারণে খালেদা জিয়া বারবার ‘ক্ষমার’ কথা বলে উদারতার রাজনৈতিক মনোভাব প্রদর্শন করছেন।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল সোমবার টুইটারে এক বার্তায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা সফল করার জন্য নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের চক্রান্ত, বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় যোগ দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে বেগবান রাখার জন্য দেশের লাখো মানুষ এবং বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থককে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানান, বিএনপি আর সহিংস আন্দোলনে জড়াবে না। বড় ধরনের কিছু না ঘটলে হরতাল বা অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে দলটির না যাওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ কারণে অন্যতম রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও একধরনের দূরত্ব বজায় রেখে চলছে বিএনপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ দরকার। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে এই পরিবেশ তৈরি হয়। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে সরকারের সহনশীলতার একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এটা বজায় থাকলে আগামী নির্বাচনের পথ সুগম হবে। জনগণের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস আসবে। আসলে মানুষের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক ও সহনশীল রাজনীতি।

দলীয় সূত্র জানায়, পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা সড়কপথের নিরাপত্তার কথাও মাথায় রাখছেন। খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের যাত্রা ও ফিরতি পথে ফেনীতে গাড়িবহর হামলার শিকার হয়েছিল। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি দিয়েও পরিবহন চলাচল বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া হয়। দুটি কর্মসূচিতে দুই ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা চিন্তিত।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, শিগগিরই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। তবে নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং নির্বাচনী কার্যক্রম—দুটোই অব্যাহত থাকবে।

বিএনপির মাঠে নামার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, খালেদা জিয়া তিন মাস ধরে বিদেশে ছিলেন। দেশে আসবেন কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল। এখন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ফলে তাঁদের উৎসাহ বাড়াটা স্বাভাবিক। এরপর আরও কর্মসূচি নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে যদি সাজা হয়ে যায়, তাহলে কী করে সেটা দেখার বিষয়।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমে হামলা ও বাধার মুখে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর আর তিনি মাঠের কর্মসূচিতে যাননি। গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্য থেকে তিন মাস পর খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন। ওই দিন বিমানবন্দর সড়কে ব্যাপক জনসমাগম করেছিল বিএনপি। এরপর কক্সবাজারের পথে পথে বিপুল জনসমাগম ও ঢাকায় বড় জনসভা করে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি সরকারকে একটা বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া বেশি দিন টিকবে না। এর প্রমাণ খালেদা জিয়ার উখিয়া সফরে আক্রমণের পর রাস্তায় লোক আরও বেড়েছে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সব বাধা উপেক্ষা করে ১৫ মাইল পায়ে হেঁটেও মানুষ যোগ দিয়েছে।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচিকে ইতিবাচক মনে করি। কিন্তু যেটা আমাদের উদ্বিগ্ন করে, তা হলো দুটি দলের এখনো পরস্পরবিরোধী অনড় অবস্থান। আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংকট, তা রাজনীতিকদের আলাপ-আলোচনা করেই সমাধান করতে হবে। তা না করে আবার যদি ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো হয়, তাহলে আমরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ