মহাজোট সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭,১৭৩টি মামলা প্রত্যাহার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ মহাজোট সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় খুন, ধর্ষন ও ডাকাতির মামলাসহ ৭,১৭৩টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। আর এতে ছাড়া পেয়ে গেছে প্রায় ১ লাখ অভিযুক্ত ব্যাক্তি। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সংক্রান্ত বর্তমান সরকারের শেষ বৈঠকে সরকার দলীয় দুই সংসদ সদস্যোর মামলাসহ ৭২টি মামলা এই বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ১৮টি মামলাও রয়েছে। সরকারে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভায় সরকার দলীয় দুই সংসদ সদস্যের মামলাসহ আরো ৭২টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। মহাজোট সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারে শেষ কার্যক্রম ছিল আজ।
বৈঠক সূত্র জানায়, নতুন পুরনো ২৭৭ টি মামলার মধ্যে বৃহস্পতিবারের (আজ) সভায় মোট ১৬৬টি মামলা আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা করে ৭২টি মামাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত। এর মধ্যে কুমিল্লার সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব). সুবিদ আলী ভূইয়া এবং টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার মামলা রয়েছে। তবে প্রত্যাহারের মামলাগুলোর মধ্যে খুনের মামলা থাকলেও নেই কোন মাদকের মামলা।
আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি সির্ভযোগ্য সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের সময়ে রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আজকের বৈঠকের আগে ৩০টি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ৩০টি বৈঠকে মোট ১১ হাজার ১১৩টি মামলা উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৭,১০১টি মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছে এই কমিটি। এতে খুনি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, ধর্ষকসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত ব্যক্তি অব্যাহতি পেয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য পাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। আজকের বৈঠকে উত্থাপিত ১৬৬টি মামলা নিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে মোট (১১,১১৩+১৬৬) ১১,২৭৯টি মামলা উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে আজকের ৭২টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে বর্তমান সরকারের সময়ে মোট মামলা প্রত্যাহারের সংখ্যা গিয়ে দাড়াল (৭,১০১+৭২) ৭,১৭৩টি।
কমিটির কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৩০টি বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগে খুন, অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতির মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও দলীয় বিবেচনায় মুক্তি পেয়েছেন। কমিটি শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীসহ খুন বা ডাকাতির মতো ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেওয়ারা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় দাগি অপরাধীরা মুক্ত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার পাশাপাশি সাধারণদের মাঝেও অসন্তোষ সৃটি হয়েছে। এই অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বেেলন, জাতীয় কমিটির বৈঠকে কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। তার পরও কেউ যদি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা মামলার বিষয়ে কোনো অভিযোগ আনেন, তাহলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে হয়রানির উদ্দেশে করা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ প্রণয়নে রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত এই জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।