রাজধানীতে ধুলার বিপদ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: শীত নামছে। এরই মধ্যে রাজধানীর বাতাস দূষিত করার যত উৎস আছে, তা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাতাস হয়ে উঠছে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। নগরবাসীর গায়ে শীতের পোশাকের সঙ্গে দূষণ থেকে বাঁচতে মুখে যোগ হচ্ছে কাপড়ের মাস্ক। মাঠে-ঘাটে নয়, রাজধানীর দু-তিনটি এলাকায় ঘুরলেই গায়ে-কাপড়ে ধুলো জমা হচ্ছে। এতে কষ্টের সঙ্গে যোগ হচ্ছে নানা রোগবালাই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ যন্ত্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ঢাকার বায়ু এখন অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। গত রোববার বায়ুমানের সূচক ছিল ১৬২। অর্থাৎ এটি বর্তমানে মানবস্বাস্থ্যের জন্য মাঝারি মাত্রায় ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বাতাসে ভারী বস্তুকণা ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ছয় ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ পরিমাপের ভিত্তিতে এই পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রায় সব কটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দূতাবাসে বায়ুমান পরিবীক্ষণ যন্ত্র আছে। গতকাল সোমবারের পর্যবেক্ষণ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। এদিনের সূচক ছিল ২২০। একই দিনে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত ভারতের দিল্লি শহরের সূচক ছিল ৩১৬।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান বলেন, ‘শীতকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণের উৎসগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই আমরা এই সময়টাকে সামনে রেখে বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালানো শুরু করেছি। কেউ যাতে পুরোনো ও প্রথাগত পদ্ধতিতে ইটভাটা করে বেশি দূষণ করতে না পারে, সে জন্য তাদের আধুনিক পদ্ধতিতে ইটভাটা স্থাপনে উৎসাহিত করছি। একই সঙ্গে রাজধানীর পুরোনো যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। নির্মাণকাজ থেকে যাতে বায়ুদূষণ না হয়, সে জন্য সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ সপ্তাহে আমরা সভা করব।’
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, তেজগাঁও থেকে শুরু করে উত্তরা, পুরান ঢাকায় ঘুরে ধুলোর দাপট চোখে পড়েছে। এতে পর্যুদস্ত নগরবাসীর জন্য স্বাভাবিক চলাফেরাই কঠিন হয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিশেষ করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিদিন এসব কষ্ট সঙ্গে নিয়ে এই নগরে চলাফেরা করছেন।
গত বছর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সারা দেশের বায়ুদূষণের উৎস ও মাত্রা নিয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী ইটভাটা, যানবাহন ও বিভিন্ন নির্মাণকাজ থেকে আসা ধুলো ২৭ শতাংশ এবং বাকিগুলো অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত হয়। মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ শীতকালে দূষণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয় জানুয়ারিতে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ তানভীর আহমেদ বলেন, রাজধানীতে বায়ুদূষণের উৎস কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে, শীতকাল শুরু হলে রাজধানীতে ভবনসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব নির্মাণকাজের সময় ধুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের পদক্ষেপ থাকে না। অথচ বড় ধরনের নির্মাণকাজের আগে পরিবেশ সমীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় কি না সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ধুলো নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো, ইট-সুরকি নির্দিষ্ট স্থানে বেড়া দিয়ে রাখার মতো ন্যূনতম কাজগুলোও দেখা যায় না। পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।