বিমানকে করপোরেশনে ফেরাতে চায় সরকার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কোম্পানি থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে আবারও করপোরেশনে ফেরাতে চায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বিমান সংস্কারে গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে এ-সংক্রান্ত সুপারিশের পর মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে। বিমানকে মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
ধারাবাহিক লোকসান ও নানা অনিয়মের মধ্যে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় করপোরেশন থেকে বিমানকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিল বিমানকে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করা। পরিচালনা পর্ষদের হাতে দেওয়া হয় এর নীতি-নির্ধারণের সার্বিক ক্ষমতা।
কোম্পানি করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে লাভ করে সরকারের শতভাগ মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৯ সালের পর বিমান আবার লোকসানের পুরোনো ধারায় ফিরে আসে। বহরে বোয়িং ৭৭৭-এর মতো নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সংস্থাটি। সর্বশেষ দুই বছর ধরে পরিচালন মুনাফার (অপারেশনাল প্রফিট) কথা বলা হলেও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার পুরোনো অভিযোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বিমান। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের একটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যা নিয়ে একাধিক তদন্ত হয়। এরপর বিমানকে সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিটির সুপারিশ পেয়েছি। কমিটি বিমানকে ফের করপোরেশনে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। এ কারণে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো ও তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য একটি সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
তবে বিমানকে কোম্পানি থেকে আবার করপোরেশনে ফিরিয়ে নেওয়া মোটেই উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্তৃত্ব বাধা সৃষ্টি করে বলেই কোম্পানি করে পরিচালনা পর্ষদকে বিমান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিমানকে কার্যকর করতে হলে এটাকে অবশ্যই বেসরকারি করতে হবে। কথা ছিল কোম্পানি করার দুই বছরের মধ্যে বাজারে শেয়ার ছাড়ার। সেটা করা হয়নি। দ্রুত শেয়ার ছেড়ে বিমানকে পাবলিক কোম্পানি করা দরকার।’
বিমানে সংস্কার করার জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের সার্বিক সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য কমিটি’ গঠন করা হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হকের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর ওপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন। কমিটি গত ৫ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিটি বিমানের সংস্কারের জন্য ১৩ দফা দীর্ঘমেয়াদি ও ২০ দফা স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ করেছে। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রিন্টিং প্রেসসহ বিমানের অপ্রয়োজনীয় পরিদপ্তরগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং কার্গো বা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান থেকে আলাদা করা। বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার ও পোলট্রি কমপ্লেক্স আলাদাভাবে পরিচালনা না করে মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি দপ্তরের মাধ্যমে পরিচালনার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এনামুল বারী বলেন, ‘সরকার বিমানকে করপোরেশন করতে চাচ্ছে কি না, তা আমার জানা নেই। আর বিমান হচ্ছে সরকারের ব্যবসা। সরকার কীভাবে ব্যবসা করবে, সেটা সরকারের বিষয়। সরকার বিমানের ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে নীতি নির্ধারণ করবে, চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে সেটা মানতে হবে।’