মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ প্রতিবাদে মিয়ানমারের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সামরিক বাহিনী বা মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ঢালাও অর্থনৈতিক বা সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। এই কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছিলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের হাতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা পরিকল্পিত ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযানের শিকার। মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে দেশে ফিরে দেওয়া বিবৃতিতে টিলারসন জানান, প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের পরই পররাষ্ট্র দপ্তর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
এই মাসের মাঝামাঝিতে মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন টিলারসন। সেখানে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তখনই তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
আর বুধবারের বিবৃতিতে টিলারসন বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠীর হামলা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ওই বিবৃতি প্রকাশের পরে পররাষ্ট্র দপ্তরের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি আরও খোলাসা করার জন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেন। তাঁরা বলেন, দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা ২৫ আগস্ট যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা করেছেন টিলারসন। কিন্তু এই হামলার জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে রোহিঙ্গাদের ওপর যে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ ও নিরীক্ষণের পরই টিলারসন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র গ্রুপসমূহের এই কার্যক্রমকে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই আক্রমণের জন্য দায়ী সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনসংগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করেছেন টিলারসন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন আইনের অধীনে মিয়ানমারের ‘সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে’ সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ গৃহীত হবে। তিনি জানান, ২০০৮ সালে গৃহীত এই আইনের অধীনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বর্তমানে চালু রয়েছে। এই আইনের কারণে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিবিশেষের ব্যাপারে অতিরিক্ত কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করা যায়, পররাষ্ট্র দপ্তর তা খতিয়ে দেখছে।
শুধু ‘সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে’ নিষেধাজ্ঞার বদলে মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার কথা কেন বিবেচনা করা হচ্ছে না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে যেমন ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, মার্কিন সরকার বর্তমানে তেমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে না। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে যে ধরনের পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র চায়, তা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অন্য প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিগত নির্মূল’ কথাটি ব্যবহারের মাধ্যমে সংকটের গভীরতা ও তীব্রতা বোঝানো হয়েছে।