ব্রিটেন-আমেরিকাতেও গুম হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্য দেশেও গুম হচ্ছে। গুম তো বহুভাবেই হচ্ছে। অনেকে ফেরতও আসছে। কিন্তু ফেরত আসা বা খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে বড় করে খবর হয় না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন পরিচালিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালের একটি হিসাবে ব্রিটেনে ২ লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনো হদিসই পাওয়া গেল না। আমেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এইটুকু ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এত মানুষের অবস্থান। তাদের সেবা ও আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করে যাচ্ছি। অথচ এই উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত। তাদের সব কিছু আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, তারপরও সেই দেশে এত লোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না। সেই তুলনায় আমরা অবস্থা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে যখন কোনো ঘটনা ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব, এটা অস্বীকার করছি না। বিরোধীদলীয় নেতা গুমের কথা বলেছেন। এই গুম তো বহুভাবেই হচ্ছে। অনেকে ফেরতও আসছে। কিন্তু ফেরত আসা বা খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে বড় করে খবর হয় না।’
কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একজন স্বনামধন্য আঁতেল গুম হয়ে গেলেন। পরে দেখা গেল উনি গুম হননি। উনি নিজে নিজেই খুলনায় গেলেন। পরে তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল। এর দোষটা আমাদের। এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা তো ঘটে যাচ্ছে। আমি তার নামধাম বলতে চাই না।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কীভাবে? যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের কি জনগণ ভোট দেবে? জনগণ কি ভোট দিয়ে ওই আপদ টেনে নিয়ে আসবে? অন্তত যাদের বিবেক আছে তারা এদের কোনো দিন ভোট দেবে না। কাজেই স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। বড় বড় কথা বলে লাভ নেই।
আইপিইউ-সিপিএ সম্মেলন বিশ্বকে দেখিয়েছে কীভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমরা কত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এটা করেছি, বিশ্ববাসী দেখেছে। এ জন্য আমরা আইপিইউ ও সিপিএর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব পেয়েছি। সফলভাবে আইপিইউ ও সিপিএ সম্মেলন করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছি, বাংলাদেশে কীভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনেকে এই নির্বাচনকে (৫ জানুয়ারির নির্বাচন) অবৈধ, এটা-সেটা বলে। মনে হয় ওই কয়েকটা লোকই সব বুঝে গেছে। তাদের মাঝে যেন জ্ঞানভান্ডার রয়েছে। সারা বিশ্বের জনপ্রতিনিধিদের যেন কোনো জ্ঞানই নেই। তারা না বুঝেই বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে দিল।’
প্রয়োজনে এ সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হবে-সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দল নির্বাচনে না এসে রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার করে বেড়াচ্ছে। আমাদের সরকারকে নাকি টেনে নামাবে। এমন একজন মানুষের মুখ থেকে এই কথাটা আসল, তাঁর নাম নিতে চাই না। তাঁর চরিত্রটা কী?’
অধিবেশন সমাপ্ত
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই অধিবেশনে মোট বিল পাস হয়েছে ৩টি। কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে ২৮৬টি নোটিশ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৫টি গৃহীত এবং গৃহীত নোটিশের মধ্যে ১১টি সংসদে আলোচিত হয়। ৭১-এর ক বিধিতে ১০৫টি নোটিশ আলোচনা হয়।
অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে সাধারণ আলোচনা শেষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।