সমঝোতা স্মারক সইয়ের দিনে এল ১১১২ রোহিঙ্গা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার দিনেই গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে টেকনাফে এল আরও ১ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে একই পরিবারের ১১ জন এল ছোট্ট ভেলায় ভেসে। প্লাস্টিকের ১১টি জারিকেন (তেল রাখার ছোট ড্রাম), তক্তা, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে বানানো একটি ভেলায় তারা নাফ নদী পাড়ি দিয়েছে। একজন পুরুষ ও একজন নারী ছাড়া পরিবারটির অন্য সদস্যরা শিশু-কিশোর।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দংখালী থেকে নাফ নদী পাড়ি দেওয়া এই ভেলাটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ১২ ফুট, প্রস্থে ৪ ফুট। এতে দুটি বৈঠা ছিল।
সকাল ১০টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় নাফ নদীর তীর থেকে প্রায় ১৫০ গজ দূরে প্রবল স্রোতের কবলে পড়ে ভেলার এক পাশের রশি ছিঁড়ে যায়। এতে ভেলাটি কাত হয়ে গেলে ভয়ে শিশুরা চিৎকার করতে থাকে। ওই সময় একটি ট্রলারে করে নদীতে টহল দিচ্ছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি দল। তারা রোহিঙ্গা পরিবারটিকে উদ্ধার করে নিরাপদে তীরে নিয়ে আসে। এই প্রতিবেদক তখন নদীর তীরে উপস্থিত ছিলেন।
অবশ্য তীরে আনার পর রোহিঙ্গা পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। রোহিঙ্গা পরিবারটিকে পরে বিজিবির হেফাজতে পাঠায় কোস্টগার্ড।
নাফ নদীর এক পাড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, অন্য পাড়ে রাখাইন রাজ্যের মংডুর দংখালী এলাকা। নদীপথে দুটি এলাকার দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। তীরের এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যায়।
বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, ভেলায় ভেসে আসা রোহিঙ্গা পরিবারটির সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মিয়ানমারের দংখালী থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয় তারা। পরিবারটি মংডুর গুদামপাড়ার বাসিন্দা। সেখানে খাবারসংকটের কারণে পরিবারটি ভেলায় করে ঝুঁকি নিয়ে টেকনাফে চলে আসে। নদী পাড়ি দিতে পৌনে তিন ঘণ্টা সময় লাগে তাদের। শুক্রবার (আজ) সকালে পরিবারটিকে টেকনাফের হারিয়াখালীতে সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হবে।
এর বাইরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে গতকাল আরও ১ হাজার ১০১ রোহিঙ্গা (ভেলায় আসা ১১ জন ছাড়া) টেকনাফে ঢুকেছে। তাদের টেকনাফের নয়াপাড়া এবং উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠায় উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে গতকালই মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়। এরপর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। বৈঠকটি হয়েছে মিয়ানমারে। আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, তাঁদের ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে ৩১৪ পরিবারে ১ হাজার ৫০ রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে। এই রোহিঙ্গারাও বিভিন্নভাবে নাফ নদী পাড়ি দিয়েছে।
এদিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বাহারছড়া ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাগর পেরিয়ে গতকাল ৫১ রোহিঙ্গা বাহারছড়ায় এসেছে। সেনাবাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দিয়ে তাদের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে টেকনাফের হারিয়াখালী ও বাহারছড়া ত্রাণকেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন আসা ৪ হাজার ৬৩৭ রোহিঙ্গাকে শিবিরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিকী।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৬ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।