ইউএনও-ওসির সঙ্গে আ.লীগের সাজাপ্রাপ্ত নেতা !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। কাগজে-কলমে তিনি পলাতক। তিনিই আজ শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার ওরফে সুরুজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় গোপালপুর উপজেলা প্রশাসন আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করে। গোপালপুর থানা সেতুর মোড়ে আয়োজিত ওই সমাবেশে সাজাপ্রাপ্ত সাইফুলকে বক্তৃতা করতে দেখে বিস্মিত হন গোপালপুরের মানুষ।
ইউএনও দিলরুবা শারমীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ ইসলাম তালুকদার। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান, পৌর মেয়র রকিবুল হক, গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
টাঙ্গাইলের ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিঞা ১৫ নভেম্বর অস্ত্র মামলায় সাইফুলকে ১৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল সাইফুলের গোপালপুর উপজেলা সদরের নন্দনপুর এলাকার বাসভবনে অভিযান চালায়। এ সময় সাইফুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে এবং তাঁর কাছ থেকে চারটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করে। পরের দিন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান টিটু বাদী হয়ে গোপালপুর থানায় সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ডিবির এসআই মিজানুর রহমান তদন্ত শেষে সাইফুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। সাইফুল ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নুরুল ইসলাম। শনিবার তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবরে সাইফুল পলাতক হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালতের কাগজপত্রে পলাতক এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও পুলিশ সাইফুলকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়নি। এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের লোকজনের সামনেই অংশ নিয়েছেন। ১৫ নভেম্বর সাজা হওয়ার পরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারাদণ্ডের প্রতিবাদে অনুসারীদের দিয়ে তিনি গোপালপুর উপজেলা সদরে একাধিক মিছিল-সমাবেশ করেছেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, তাঁর কর্মকাণ্ডে গোপালপুরে দল ও সরকারের বদনাম হচ্ছে। আইনের প্রতি তাঁর কোনো শ্রদ্ধা নেই। তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাঁরাও বিব্রত।
সাইফুলের সাজার রায়ের দিন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেছিলেন, সাইফুল যেহেতু আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাই তাঁর আর দলের নেতৃত্বে থাকার সুযোগ নেই। তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আজ শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। ইউএনও বলেন, শোভাযাত্রা শেষ করে তিনি স্বাগত বক্তব্য দিয়ে চলে আসেন। সাইফুল বক্তব্য দিয়েছেন কি না, তা তিনি জানেন না।
গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, তিনি সাইফুলের কারাদণ্ডের বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাননি। তবে যেহেতু তাঁকে আদালত ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন, তাঁর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়াটা মোটেও উচিত হয়নি। সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।