নেপালে ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোট চলছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচনে আজ রোববার ভোট দিচ্ছে নেপালের জনগণ। ভোট চলাকালে সতর্ক অবস্থানে আছে সেনাবাহিনী। নির্বাচন ঘিরে ছোটখাটো বিস্ফোরণের জন্য মাওবাদী উগ্রপন্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। তবে সব সহিংসতা পেছনে ফেলে দেশটির জনগণের প্রধান চাওয়া স্থিতিশীলতা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ সমাপ্তির প্রায় এক দশক পরে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের রাজতন্ত্র থেকে ফেডারেল রিপাবলিক হওয়ার যাত্রা শুরু করবে নেপাল। নতুন সংবিধানে নেপালকে ফেডারেল, অর্থাৎ সাতটি প্রদেশে বিভক্ত এবং হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার পর এটাই প্রথম নির্বাচন। এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দফায় আজ ৩২টি জেলায় এবং দ্বিতীয় দফায় আগামী ৭ ডিসেম্বর ৪৫টি জেলায় ভোট হবে। নেপালে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৪ লাখ।
নেপালের জাতীয় নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াই করছে দুটি জোট। শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে নেপাল কংগ্রেস পরিচালিত ‘গণতান্ত্রিক জোট’ বনাম কে পি অলির কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল) এবং পুষ্পকমল দাহালের ওরফে প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব মাওয়িস্ট সেন্টারসহ বাম দলগুলোর মঞ্চ ‘বাম জোটে’র মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। নেপালের অন্যতম প্রধান এই দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোট গঠনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ অভিন্ন দল গঠনেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। কংগ্রেস ও দুই কমিউনিস্ট পার্টি পালাক্রমে নেপালের ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে।
১৯৯০ থেকে নেপালে বহুদলীয় নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু একটি পার্লামেন্টও পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি।
নির্বাচন কমিশন বলছে, জটিল গণনাপদ্ধতির কারণে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাইন রাজ দাহাল বলেছেন, মাওবাদীদের বিভক্ত একটি দল কয়েকটি সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের পেছনে রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী গত শুক্রবার থেকে প্রায় ৩০টি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসেস নিষ্ক্রিয় করেছে।
রাজধানী কাঠমান্ডুর কাছে কাগাতিগন কেন্দ্রে প্রথম ভোট দেন সুরেশ বালসামি নামের ৩২ বছর বয়সী এক বাসচালক। তিনি বলেন, ‘আমি শান্তি, উন্নয়ন ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য ভোট দিয়েছি।’
সর্বশেষ ২০০৮ ও ২০১৩ সালে নেপালে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এ বছরের মাঝামাঝি তিন দফায় হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। পূর্ববর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন ছিল মূলত সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে সংবিধানসভার নির্বাচন। সেই হিসাবে ১৭ বছর পর এবার জনপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গড়তে নেপালে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। এ ছাড়া আসন্ন ভোট নেপালের জন্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেপাল প্রকৃতই এক ফেডারেল শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চলেছে।
নেপাল বর্তমানে যে ফেডারেল পার্লামেন্ট গঠন করতে যাচ্ছে, তাতে পুরো দেশে নির্বাচনী আসন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৫ টি। আগে আসনসংখ্যা ছিল ২৪০। ১৬৫টি সাধারণ আসনে সেখানে সরাসরি ভোট হবে। এ ছাড়া আরও ১১০ জন পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হবেন বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। অর্থাৎ, বিভিন্ন দল থেকে মনোনীত ব্যক্তি পর্যায়ের প্রার্থিতা থেকে ১৬৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং দলগুলোর পাওয়া ভোটের আনুপাতিক হিস্যার ভিত্তিতে আরও ১১০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। এভাবেই গঠিত হবে ২৭৫ সদস্যের ফেডারেল পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টে দলীয় পরিচয় জারি রাখতে একটি দলকে সরাসরি নির্বাচনে অন্তত একটি আসন এবং দলভিত্তিক ভোটের অন্তত ৩ শতাংশ পেতে হবে।
নেপাল কংগ্রেস পার্টিকে ভারতঘেঁষা বলে মনে করা হয়। এদিকে কমিউনিস্ট পার্টিকে মনে করা হয় চীনঘনিষ্ঠ। ভারত-চীনের প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য প্রয়োজন দেশটির। তবে নির্বাচনের ফলে নেপালে কোন দেশের প্রভাব বেশি হবে, তা বোঝা যাবে। ভারত ও চীন দুটি দেশই নেপালের জলবিদ্যুৎ থেকে সুবিধা নিতে চায়।
হিমালয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত নেপাল বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশ হিসেবেও পরিচিত। পর্যটন ও বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল দেশটি। দেশটির ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের এক–পঞ্চমাংশ দৈনিক ১ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলারের কম খরচে জীবন নির্বাহ করে। ২০১৫ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশটিতে নয় হাজার মানুষ মারা যায়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশটি।