পার্বত্য চুক্তি নিয়ে অবস্থান পাল্টায়নি ইউপিডিএফ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: শুরু থেকেই পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে পাহাড়িদের একটি গোষ্ঠী। এই বিরোধিতা থেকেই সরকারের সঙ্গে চুক্তি করা সংগঠন জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নামে পৃথক সংগঠনের জন্ম হয়। ইউপিডিএফ এখন পর্যন্ত পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান বদলায়নি। স্থানীয় নির্বাচনেও এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিচয়ে অংশ নিচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি জেলার চারটি উপজেলার (লক্ষ্মীছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, গুইমারা ও পানছড়ি) চেয়ারম্যানসহ বেশ কিছু ইউনিয়নে ইউপিডিএফের নেতারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তাঁরা অবশ্য নিজেদের ইউপিডিএফ থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বলে স্বীকার করতে চান না। নাম উদ্ধৃত হয়ে এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা। তবে ইউপিডিএফের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নেন।
তবে খাগড়াছড়ির বাইরে রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় ইউপিডিএফের কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ইউপিডিএফের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৯৯ হাজার ৫৮ ভোট, আর ইউপিডিএফ ৬৭ হাজার ৮০০ ভোট। জেলার তিনটি উপজেলা ছাড়াও ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রয়েছেন ৬৮ জন।
পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করেও ইউপিডিএফ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে কীভাবে জয়ী হচ্ছে, তা জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা দাবি করেন, ইউপিডিএফ জনগণকে ভয় দেখিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করে।
খাগড়াছড়ি বিএনপির সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, বিএনপির সমর্থিত লোকজন স্বাভাবিকভাবে ভোট দিতে পারছে না। এই সুযোগে ইউপিডিএফ নিরীহ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করছে।
তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার সংগঠক মাইকেল চাকমা দাবি করেন, নির্বাচনের সময় জোর করে ভোট আদায় করার কাজ তাঁরা করেন না। ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সংগঠন। জোর করে ভোট আদায়ের অভিযোগ যাঁরা করছেন, তাঁরা এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। জেলার চারজন উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁদের সংগঠনের বলে স্বীকার করেন তিনি।
চুক্তির বিষয়ে ইউপিডিএফের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের সঙ্গে যে ‘প্রতারণা’ করেছে, তা শুধু ইউপিডিএফ নয়, চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের বক্তব্যে এখন তা পরিষ্কার।
তবে ইউপিডিএফের এই বক্তব্য ঠিক নয় উল্লেখ করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এর সুফল পাচ্ছে পাহাড়ের মানুষ।
পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে বেশ কিছু নেতা-কর্মী নতুন দল ইউপিডিএফ গঠন করেছিলেন। প্রায় ২০ বছর পর ইউপিডিএফ ভেঙে গত নভেম্বর মাসে খাগড়াছড়ি শহরে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন দল গঠন করা হয়। ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা আগে ইউপিডিএফ রাঙামাটি জেলার সংগঠক ছিলেন।