সরকার চাইলে আলোচনায় রাজি ইউনূস

yunus ইউনুসরিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ‘পরামর্শ’ চাইলে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার রাজধানীর মিরপুরে ইউনূস সেন্টারে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কল্যাণ পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময় করে।

“সভায় মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

“এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, সরকার যদি তার কাছে কোনো পরামর্শ চেয়ে আলাপ করে, তিনি আলাপে অংশগ্রহণ করবেন।”

এ্রর  আগে গত ২২ অগাস্ট কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইউনূস বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের দ্রই প্রধান রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ওই বক্তব্যের মাধ্যমে কার্যত নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন গ্রামীণ ব্যাংকের এই সাবেক এমডি।

বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার পর থেকেই তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিকরা।

এর আগে কখনো সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে ইউনূসের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায়ই তাকে বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে।

কাদের সিদ্দিকীর আগে গত ৭ জুলাই বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৭ জুন এবং ওই মাসেই খালেদা জিয়ার অভিনন্দনপত্র নিয়ে বিএনপির আরেকটি প্রতিনিধিদল মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সোমবার ইউনূস বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলিই আমার কাছে আসছে। আমি কারো কাছে যাচ্ছি না”।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দেশে অশান্তি কমবে বলে সোমবারও তিনি মত প্রকাশ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ইউনূসের এই অবস্থানকে স্বাগত জানালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা এর সমালোচনা করেছেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ইউনূস কৌশলে রাজনীতি করছে।

ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “সম্প্রতি আপনি অযাচিতভাবে নানা কথা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, কার কথায় আপনি নসিয়ত করে বেড়াচ্ছেন?”

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েও পরে ইউনূসের সরে আসার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সরকারের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “এবার আশা করবো মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন না। উনার মতো সম্মানিত মানুষ রাজনীতি করছেন দেখে ভাল লাগছে। এখন ড. ইউনূসের সঙ্গে আমরাও রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলব।”

অবশ্য কাদের সিদ্দিকীর মতো কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইবরাহিমও গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

সোমবার মত বিনিময় শেষে ইবরাহিম সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দল প্রফেসর ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের সম্মান রক্ষার্থে তাদের পাশে থাকবে।”

দেশের শান্তির স্বার্থে জাতীয় সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য তিনি ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান বলেও কল্যাণ পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মোশতাক হোসেন চৌধুরী, ফোরকান ইবরাহিম, মহাসচিব আব্দুল মালেক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠতম সহ-সভাপতি এএফএম নুরুদ্দীন ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ