কোচিংয়ের প্রশ্নে সরকারি স্কুলের পরীক্ষা !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় একটি বিষয়ে কোচিংয়ের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা তদন্তে আজ মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, গত শনিবার বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক বেল্লাল হোসেন তাঁর কোচিং-এ চূড়ান্ত বার্ষিক মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেন। সেই পরীক্ষায় যে প্রশ্নপত্র ছিল, বিদ্যালয়ের পরীক্ষায়ও হুবহু সেই একই প্রশ্নপত্রে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় শ্রেণির সাতজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক মো. বেল্লাল হোসেন বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক। সেই সঙ্গে তিনি প্রভাতি শাখার ক্লাস টিচার। তিনি ক্লাস ছুটির পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং ক্লাস করাতেন। কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার এক নম্বর প্রশ্ন থেকে তিন নম্বর প্রশ্ন এবং প্রতিটি প্রশ্নের ক, খ, গ সবকিছু হুবহু মিল রয়েছে। ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে সম্পূর্ণ একই প্রশ্ন ছিল। মডেল টেস্ট, সাজেশন বিভিন্ন নামে অনেক অসৎ শিক্ষকই এ ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
একাধিক অভিভাবক বলেন, বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ শহরের একাধিক স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। শুধু বার্ষিক পরীক্ষা নয়, প্রথম সাময়িক ও অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হচ্ছে বিভিন্ন কোচিং থেকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষক মো. বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মতিন হাওলাদার বলেন, ‘অভিভাবকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি। আজ মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মাওলানা শেখ আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, অবশ্যই তা অপরাধ। অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাঁর সাজা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জেলা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন নয়। জেলা প্রশাসক সেখানকার সভাপতি এবং তাদের শিক্ষকদের বদলি, পদায়ন বিভাগীয় অফিস থেকে হয়। তারপরও যদি এ ধরনের অপরাধ হয়ে থাকে, তার জন্য আমাদের যা করার তা করব।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ ধরনের ঘটনা ন্যক্কারজনক। সরকারের অবস্থান কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে, আবার বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।’