কাউন্সিলরের যে নির্দেশে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের আওতাধীন এলাকায় বাড়ির ফটক ও দোকানের শাটার লাল-সবুজ রং দিয়ে জাতীয় পতাকার আদলে রাঙাতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি মাইকিংও হয়।

কাউন্সিলরের অভিপ্রায় পূরণে আরামবাগ, ফকিরাপুলের এলাকাবাসীরা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষেই হুট করে এ ধরনের অভিপ্রায় পূরণ কষ্টসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একেকটি শাটার রাঙাতে কম করে হলেও দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাগবে। যাঁদের দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একাধিক, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ। আর নির্দেশ বা নোটিশ দিয়ে দেশপ্রেম দেখানো যায় কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

বিরক্ত হলেও উপায় নেই বলে অনেকেই রং দিয়ে জাতীয় পতাকা আঁকিয়েছেন, আর অনেকে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অভিপ্রায় পূরণের শেষ তারিখ আজ ১৩ ডিসেম্বর।

কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের অভিপ্রায় জানানো হয়েছে আরামবাগ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চিঠির আকারে এক নোটিশের মাধ্যমে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এ সোসাইটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাউন্সিলর।

১১ ডিসেম্বর এ সোসাইটির সভাপতি আ বা ম ফরিদ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল আলমের সই করা এ নোটিশে বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিজয়ের শুভেচ্ছা দিয়ে সবার অবগতি ও ‘কার্যকর’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘…পরিবেশকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন যে, বাড়ির মালিক ও সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীগণ নিজ দায়িত্বে বাড়ির গেট, দোকান/প্রেসের শাটার বাংলাদেশের মানচিত্র লাল-সবুজ রং এ রাঙাতে হবে’।

নোটিশে ১৩ ডিসেম্বর, অর্থাৎ, আজকের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আনন্দ-উৎসবের জন্য লাল-সবুজের পতাকার রং এ রাঙিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়।

এই লিখিত নোটিশে কী বলা হয়েছে, তা জানেন না বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ। আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এ সামাজিক সংগঠন আমার কাছে এসেছিল। রিকোয়েস্ট করেছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও চিন্তাধারা থেকে মনে হয়েছে, সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি সামাজিকভাবে এভাবে স্বাধীনতার অর্জনকে ধারণ করতে পারি। নতুন প্রজন্ম দেশকে ভালোবাসবে তাই চাই। সামাজিকভাবে তা তুলে ধরা যাবে। তবে চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘নোটিশ দিছে। লিফলেট দিছে। মাইকিং এ বলছে-কমিশনার সাহেবের অনুরোধ…তাই বেশি ভয় পাইছি। রাস্তার পাশেই আমার দোকান, তাই চোখে পড়ব সবার আগে। আর পুকুরে বাস করে তো আর কুমিরের সঙ্গে লাগতে পারি না। মান-সম্মানেরও বিষয়। রং না করলে কমিশনারের পোলাপাইন আইসা যদি ধমক দেয়, চড়-থাপ্পড় দেয়, তাই রং কিনছি। মিস্ত্রি আনছি।

একাধিক ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাটারে জাতীয় পতাকা রং করলেও তা দিনের বেলায় দেখা যাবে না। রাতে শাটার বন্ধ করলেই শুধু তা দেখা যাবে। আর জাতীয় পতাকার নির্দিষ্ট একটি মাপ আছে, কিছু নিয়ম কানুন আছে। কিন্তু এ নির্দেশ পালন করতে গিয়ে অত কিছু দেখার আর সময় নেই।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানালেন, তাঁরা নিজেদের আবেগ থেকেই ১৬ ডিসেম্বরে বাসা ও দোকানে জাতীয় পতাকা উড়ান। কিন্তু এভাবে নির্দেশ দেওয়ায় তাঁরা বিরক্ত হয়েছেন। এভাবে তিনি নির্দেশ দিতে পারেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ