কারাগারের স্থাপনা ফখরুদ্দিনকে ভাড়া !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনের একাংশ ভাড়া দেওয়া হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, দেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা এভাবে ভাড়া দেওয়া ঠিক হবে না।
ভাড়া দেওয়া অংশটির আয়তন প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুট। সেখানে আগে ক্যানটিন ও কারাবন্দীদের তৈরি করা পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র ছিল। জায়গাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাবকে। গত মঙ্গলবার রেস্তোরাঁটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
কারাগারের জায়গায় রেস্তোরাঁ চালুর প্রতিবাদে ১০ ডিসেম্বর নাজিমুদ্দিন রোডে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা রক্ষা জাতীয় কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ কারা মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম (ডিআইজি প্রিজন, ঢাকা) বলেন, ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাবকে ভাড়া দেওয়া ভবনটি মূল কারাগারের সীমানার বাইরে। জায়গাটি রেস্তোরাঁকে ছয় মাসের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ছয় মাস পর কারাগারের সংস্কারকাজ শুরু হবে। তখন ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক ঘেঁষা (উত্তর পাশে) তিনতলা ভবনের নিচতলায় ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব। পুরো রেস্তোরাঁ পরিপাটি। উদ্বোধন উপলক্ষে ধোয়ামোছা করছেন কর্মচারীরা। ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির কর্মীরা জানান, কারাগারের ক্যানটিন রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করবে প্রতিষ্ঠানটি। আর পৃথক দুটি বড় কক্ষে ক্রেতাদের জায়গা করা হয়েছে।
ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাবের ব্যবস্থাপক সাফিন হোসেন বলেন, মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়ায় কারাগারের এই জায়গা সাময়িকভাবে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ যখন বলবে, তখনই তাঁরা সরে যাবেন।
তবে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা রক্ষা জাতীয় কমিটি সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান বলেন, কারাগারটিতে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার অনেক স্মৃতিচিহ্ন আছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এটি কারাগারের ঐতিহ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, পুরোনো এই কারাগারে জাদুঘর, মাঠ-পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সেই উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বিকল্প কিছু হলে পুরান ঢাকাবাসী তা মানবে না।
২০১৬ সালের ২৯ জুলাই পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ার রাজেন্দ্রপুরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর প্রায় ১৭ একর আয়তনের কারাগার কয়েক দফায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কারাগারটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করতে গত ৩০ অক্টোবর শিল্পকলা একাডেমিতে নতুন নকশা প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কারা অধিদপ্তর। এতে ২৮টি প্রতিষ্ঠান ৩৪টি নকশা প্রদর্শন করে। এর মধ্য থেকে একটি নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এই নকশা প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে শিগগিরই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।