ছোট দলগুলো কেন পারছে না ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: আলোচনাটি বাংলাদেশের ‘গণফোরাম’ ‘বিকল্পধারা’ বা ‘নাগরিক ঐক্য’ কিংবা পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিয়েও হতে পারত। হতে পারত নেপালের ‘বিবেকশীল সাজা পার্টি’কে নিয়েও, যারা সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে কাঠমান্ডু ভ্যালিতে বিপুল আশা জাগিয়েও ফলাফলের ক্ষেত্রে কার্যত সফল হয়নি।
ভারতের আম আদমি (এএপি), নেপালের বিবেকশীল বা বাংলাদেশের গণফোরাম নিজ নিজ দেশে ‘পরিবর্তন-আকাঙ্ক্ষী’ সচেতন নাগরিক পরিমণ্ডলে এবং বিশেষভাবে শহুরে সুশীল সমাজে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির বিকল্প হওয়ার প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, কিন্তু কার্যত ‘মূলধারা’র রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ন্যূনতম কোনো চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারেনি। পিটিআইকে নিয়ে প্রত্যাশা যদিও শেষ হয়ে যায়নি, তবে দলটির দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর তারিন দুর্নীতির দায়ে বিচারালয়কতৃর্ক রাজনীতি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন গত সপ্তাহে। অথচ দুর্নীতির বিরুদ্ধেই ছিল ইমরান খানের (পিটিআইয়ের) জিহাদ। আরও স্ববিরোধিতা হলো, নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে অনুরূপ রায়ের পর পিটিআই তাঁর পদত্যাগ দেখতে মুহূর্ত দেরি করতে প্রস্তুত ছিল না, কিন্তু জাহাঙ্গীর তারিনের রায়ের পর দলটি বলছে, তারা তবু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁকে রাখতে ইচ্ছুক!
কোথাও সাংগঠনিকভাবে এবং কোথাও নৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় নবীন দলগুলোর এই যে ব্যর্থতা, এর পেছনে কারণগুলো কী?
উপরিউক্ত দলগুলোর সাংগঠনিক ও ভোট-ব্যর্থতার একটা কারণ হতে পারে, তৃণমূলে মানুষ আসলেই পরিবর্তন প্রত্যাশী নয়। আরেকটি কারণ হতে পারে, উদ্যোগগুলোর পেছনে কোনো সাংগঠনিক গলদ কাজ করছে। কিংবা সমাজের গভীরে রয়েছে—এমন কোনো গোপন সাংস্কৃতিক বিন্যাস, যার মর্ম বুঝতে অক্ষম শহুরে সুশীল শক্তি, যারা এসব দল গড়ার মূল উদ্যোক্তা। উপরন্তু, এও হতে পারে, দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ও নেতৃত্ব কেউই হয়তো স্থানীয় আর্থসামাজিক মূল্যবোধের কারণেই এখনো একই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত, নৈতিকভাবে স্বচ্ছ এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংস্থা গড়তে সক্ষম নয়। এরূপ প্রতিটি অনুমানই বিতর্কিত, কিন্তু নিঃসন্দেহে পর্যালোচনার দাবি রাখে।
আপাতত স্থানীয় পরিসরে বিতর্ক এড়াতে আমরা আম এএপির দিকে মনোযোগী হতে পারি। আলোচনার জন্য তাদের বাছাইয়ের আরেকটি কারণ হলো দলটি পিটিআই ও গণফোরামের চেয়ে নবীন এবং বিবেকশীলের চেয়ে পুরোনো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দলটির উত্থানপর্ব দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল এবং এখন আবার তার পতনও বিশ্লেষকদের বিশেষ মনোযোগ দাবি করছে। এমনকি ওপরের তালিকার যে দুটি দল সম্পর্কে এখনো চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি, সেই পিটিআই এবং বিবেকশীলের জন্যও এএপি কিছু শিক্ষা রেখে যাচ্ছে হয়তো।
গত নভেম্বরে পাঁচ বছর পূর্ণ হলো এএপির। মাত্র পাঁচ বছর আগে মাথায় ‘আমরা স্বরাজ চাই’ লেখা সাদা টুপি পরে কেজরিওয়াল ও তাঁর লাখ লাখ তরুণ অনুসারী ভারতের পাশাপাশি আশপাশের দেশগুলোতেও রাজনৈতিক বিস্ময় হয়ে উঠেছিল। এখন বোধ হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির সেই দৃশ্যটি কল্পনা করাও কঠিন যে নবীন এই দল দিল্লিতে বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টি পেয়েছিল। তখন মনে হচ্ছিল, ভোটাররা ভারতীয় রাজনীতির বটবৃক্ষ আরএসএস ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে শরিক হতে দ্বিধাহীন। অনেক মেধাবী ভারতীয় তরুণ-তরুণী সে সময় দেশ-বিদেশের বড় চাকরি ছেড়ে প্রথমে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে এবং পরে সেই আন্দোলনের তরুণ সংগঠকের উদ্যোগে গঠিত এএপিতে যুক্ত হন। যেভাবে বিবিসির নেপালি সার্ভিস প্রধানের পদ ছেড়ে খ্যাতনামা সাংবাদিক রবীন্দ্র মিশ্র এ বছর মার্চে বিবেকশীল সাজা পার্টি করতে এসেছিলেন দেশটির রাজনীতিতে ‘সৎ মানুষদের একটি প্ল্যাটফর্ম’ গড়ে তুলেতে। একইভাবে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৯৬ সালে গোড়াপত্তন করেছিলেন পিটিআইয়ের।
আত্মবিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা, উচ্ছ্বাস এবং অতঃপর…
রবীন্দ্র মিশ্র, ইমরান খান, কেজরিওয়াল এবং তাঁদের সহযোগীরা ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের কার্যক্রমের অস্বচ্ছতায় ছিলেন ক্ষুব্ধ। ভারতে এএপির উত্থানই হয়েছে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের খ্যাতনামা সংগ্রামী আন্না হাজারের ডাকে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবিরোধী গণ-আন্দোলনের গর্ভ থেকে। ২০১১ সালে সেই আন্দোলন সর্বভারতীয় আলোড়ন তুলেছিল এবং আন্দোলনকালে জরিপ চালিয়ে দেখা গিয়েছিল, ৭০ শতাংশ মানুষ চাইছে এমন একটি দল গড়ে ওঠা দরকার, যারা ক্ষমতায় গিয়ে (স্বাধীন জনলোকপাল বিলের মতো) কিছু আইনগত কাঠামো গড়ে তুলবে, যা দুর্নীতি রোধ করবে। এই আকাঙ্ক্ষারই ফসল ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বরে ‘টিম-আন্না’র ভেতর থেকে জন্ম নেওয়া এএপি। এই দলের আবির্ভাব বিশ্বজুড়ে প্রবাসী ভারতীয়দের মাঝে এত আগ্রহ তৈরি করে যে ২০১৩ সালে তাদের সমর্থনে শিকাগোতে বিশাল এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনও হয়। অরুণা রাও এবং মেধা পাটকেরের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লড়াকু সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্টরা যুক্ত হওয়ায় এএপিকে তখন বিশ্ব প্রচারমাধ্যম প্রাচ্যের রাজনীতিতে মনযোগ আকর্ষনী এক সমাজ রূপান্তরবাদী বিপ্লব হিসেবে তুলে ধরছিল। যে ‘বিপ্লব’ এই বার্তা দিচ্ছিল, দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে অর্থ, সশস্ত্রশক্তি ও ধর্ম-বর্ণের ব্যবহার ছাড়াও জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠা সম্ভব।
সেই আত্মবিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষা, উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার রেশ অনেকখানি কেটে গেছে। সর্বশেষ চিত্রটির কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরা যায়। অতি সম্প্রতি শেষ হওয়া গুজরাট নির্বাচনে এএপি ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। সর্বত্রই তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যে আসনে তাদের প্রার্থী সবচেয়ে ভালো করেছে, সেখানে ‘ঝাড়ু মার্কা’ ভোট পেয়েছে ৪ হাজার ৫০০। কিছু কিছু আসনে তারা দুই-তিন শ ভোট পেয়েছে। গুজরাটের আগে ভোট হয়েছিল গোয়ায়। সেখানে ৩৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে এএপির ৩৮ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। অথচ এসব রাজ্যে একসময় কেজরিওয়ালের সমাবেশগুলোয় বিপুল মানুষ আগ্রহভরে উপস্থিত হতেন। এই শ্রোতারা বিশ্বাস করতেন, কেবল ‘ঝাড়ু’ মার্কা প্রতীক নেওয়ার কারণেই নয়, কেজরিওয়াল ও তাঁর সহযোগীদের আসলেই রাজনীতি ও প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন করার ইচ্ছা আছে।
কিন্তু এরপরই কয়েকটি ঘটনা ঘটে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দেয় দলে; অন্যতম উদ্যোক্তা যোগেন্দ্র যাদব ও প্রশান্ত ভূষণ বহিষ্কৃত হন ২০১৫ সালের এপ্রিলে। এই দুজনের সমর্থকদেরও একে একে বাদ দেওয়া হয়। কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও দলে কোটারি গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে এএপির নির্বাচনী পরাজয়ও শুরু হয়, প্রচলিত রাজনীতির বাস্তব ময়দানে দিন শেষে যে হিসাব গুরুত্বপূর্ণ। এখন দিল্লি ও পাঞ্জাবের বাইরে দলটির কোনো সক্রিয় উপস্থিতি নেই। দলটি কেবল যে নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে তা-ই নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুতীব্র যে নৈতিক শক্তি নিয়ে এই দলের জন্ম, সেটাও আর সামান্যই অবশিষ্ট আছে। দুই-তিন মাস আগে দলের বহিষ্কৃত নেতা কপিল মিশ্র খোদ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধেই দুই কোটি রুপি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছিলেন।
তবে নিশ্চয়ই এরূপ নৈতিক সংকট কিংবা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই এ রকম একটি রাজনৈতিক সম্ভাবনার অপমৃত্যুর সবটুকু উত্তর নয়। বাংলাদেশে বিকল্পধারা বা নাগরিক ঐক্য বা গণফোরাম খুব বেশি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মুখে পড়েনি, কিন্তু নিজেদের বিকশিতও করতে পারেনি। নেপালে ৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় লাখো মানুষ বিবেকশীল দলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করলেও কার্যত তাকে ‘জাতীয় দল’ হয়ে ওঠার মতো ভোটও (প্রদত্ত বৈধ ভোটের অন্তত ৩ শতাংশ) দেয়নি। কাঠমান্ডুর ‘সচেতন মহলে’ এই দল নিয়ে ব্যাপক সহানুভূতি দেখা গেলেও সেখানে একটি আসনও পায়নি তারা। পাকিস্তানে পিটিআই দেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার কথা থাকলেও ইমরান খানের পাশে এমন অনেক রাজনীতিবিদ ভিড় করেছেন, যাঁরা অতীতে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের সঙ্গেই ছিলেন এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী নন।
মিথ, ধর্ম, বর্ণ ও পরিবারতন্ত্র পাশেই থাকছে ভোটাররা!
মূলত নগরভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী জিহাদ এবং সুশাসনের ডাক দিয়ে জন্ম নেওয়া উপরিউক্ত দলগুলো দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে মাঠপর্যায়ে দাবিকৃত নৈতিক শক্তি নিয়ে যে দাঁড়াতে পারছে না, তার পেছনে জনমতের কিছু ভাবাদর্শিক প্রবণতাও চিহ্নিত করা যায়। ভারতে দেখা যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং পরিবারভিত্তিক কংগ্রেসের আশপাশেই থাকছেন ভোটাররা। পণ্ডিতদের তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা হলো, মানুষ ‘স্থিতিশীলতা’ চাইছে। হয়তো কথিত সেই ‘স্থিতিশীলতা’র খোঁজেই নেপালে নানান চড়াই-উতরাই শেষে মার্কসবাদীদের ভোট দিল জনগণ, সেই ভোট কতটা তাদের শ্রেণিসংগ্রাম ও আন্তর্জাতিকতাবাদের কারণে আর কতটা ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বদৌলতে, সে নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চলছে এখন। অথচ সেখানে ভোটজয়ী মার্কসবাদীদের প্রচলিত রাজনীতির অনেক কলুষই যে গ্রাস করেছে, তা নিয়ে কাঠমান্ডুর শিক্ষিত তরুণদের ব্যাপক হতাশা।
বাংলাদেশে এরূপ হতাশার মাত্রা আরও ব্যাপক। পরিবারভিত্তিক রাজনীতিই সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে এখানে সুশীল উদ্যোগগুলোর ছাই-ভস্মের ওপর। শ্রীলঙ্কাতেও তাই। এই দুই দেশসহ পাকিস্তান-ভারতেও ভোটাররা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে ভীষণ আগ্রহী হলেও দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অপরাধপ্রবণ রাজনীতিবিদের উদারভাবে ভোট দিতে প্রস্তুত তাঁরা। যে রাজনীতিবিদেরা কার্যত খুদে খুদে গডফাদার হয়ে দেশগুলোকে ভাগ করে নিয়েছেন বলা যায়। রাজনৈতিক পরিসরের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী কিছু প্রচারমাধ্যম যতটা সরব সাধারণ মানুষ এ সমস্যাকে কতটা নিজ নিজ দেশের ভবিষ্যতের প্রধান প্রতিপক্ষÿভাবছে, সে প্রশ্নে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। দক্ষিণ এশিয়ার সমাজের এক মহা গোলকধাঁধা এটা। রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের মেলবন্ধনেও এই অঞ্চলের ভোটারদের খুব বেশি আপত্তি আছে বলে বাস্তব তথ্য মেলে না, যেমনটি দাবি প্রগতিশীল মহলের। বরং অল্পবিস্তর ধর্মকে ব্যবহার করেই বড়সড় সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের আরএসএস, কংগ্রেস; পাকিস্তানের মুসলিম লিগ; মিয়ানমারের এনএলডি কিংবা শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষের দল। পাশাপাশি সত্য-মিথ্যার মিশেলে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক মিথগুলোই এখনো এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি দেশে রাজনীতির প্রধান এক জ্বালানি হয়ে আছে। সেসব মিথ, ধর্ম, বর্ণব্যবস্থা ও পরিবারতন্ত্র যেন সাধারণ মানুষের এক মনস্তাত্ত্বিক আশ্রয়। তাদের এই নির্ভরতার শক্তিতে ফাটল ধরাতে পারেননি কেজরিওয়াল, পারেননি ড. কামাল হোসেন, পারছেন না রবীন্দ্র মিশ্রও। শ্রীলঙ্কায় জনতা বিমুক্তি পেরামুনাও (জেভিপি) বহু আগেই এ ক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছিল।
প্রাচ্যের সংগঠন-সংস্কৃতি: অধরা ‘টিমওয়ার্ক’
প্রচলিত ধারায় দল গঠনের পর টিমওয়ার্ক ধরে রাখা যায় না প্রাচ্যের সংগঠন-সংস্কৃতিতে, এও যেন নবীন দলগুলোর সূত্রে পাওয়া বিশেষ এক সমাজতাত্ত্বিক বার্তা। পিটিআই ও এএপি শুরুতে রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা এবং টিমওয়ার্কের ওপর জোর দিয়েছিল। কিন্তু এসব দল শেষ বিচারে এক ব্যক্তিনির্ভর দলেই পরিণত হয়েছে। কিছু আপত্তি থাকলেও বাংলাদেশের গণফোরাম বা বিকল্পধারাকেও এ রকম তালিকায় যুক্ত করা যায়।
ব্যক্তিনেতার ক্যারিশমার বদলে ইশতেহারের শক্তিতে সমাজকে সম্মোহিত করার অঙ্গীকার থাকলেও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে জেলা শহরগুলোর গুটিকয়েক হতাশ মধ্যবিত্তের চৌহদ্দি পেরিয়ে এসব দলের সাংগঠনিক স্পর্শ কখনোই তৃণমূলের ক্ষমতাকেন্দ্রের প্রকৃত আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন বুঝতে পারেনি। এই অস্পষ্ট এলিটিজমের চেয়ে নিয়মিত হাতের কাছে পাওয়া চাঁদাবাজ, মাস্তানেরাই নিরাপত্তাবলয় ও ভরসা হিসেবে থাকছে গ্রাম-শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের। সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক পর্যবেক্ষণ হলো, যত দিন ‘পরিবর্তনবাদী’ উপরিউক্ত নবীন দলগুলো ‘আন্দোলন’ আকারে হাজির ছিল এবং অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট ক্রোধ বজায় ছিল তাদের, তত দিনই জন-আগ্রহ ছিল, ‘দল’ হয়ে ওঠার পরই তাতে চিড় ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ হয়তো কিছু দলকে ‘শাসক’ হিসেবে এবং কিছু দলকে ‘আন্দোলনের শক্তি’ হিসেবে পৃথক পৃথক পরিসরে দেখতে চায়; বিশেষত যখন তারা মনে করছে রাষ্ট্রের মৌলিক রূপান্তর ব্যতীত সব সংস্কারবাদী প্রতিশ্রুতিই ব্যর্থ হতে বাধ্য।