চাঁদা তুলে চলছে রাস্তা সংস্কার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বছরের ছয় থেকে আট মাস পানিবন্দী থাকেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরপাড়ের পূর্ব বেলাগাঁও গ্রামের মানুষ। কণ্ঠিনালা নদীর পাড় দিয়ে চলে যাওয়া গ্রামের চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটিও পানিতে ডুবে থাকে। তখন নৌকাই গ্রামবাসীর চলাচলের ভরসা।
রাস্তাটি উঁচু করে পাকা করার দাবি গ্রামবাসীর। কিন্তু তা হয়নি। এ অবস্থায় গ্রামবাসী চাঁদা তুলে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ভাড়া করে এনে মাটি কেটে রাস্তাটি উঁচু করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা উঁচু করাও হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, কণ্ঠিনালা নদীর পাড় দিয়ে হাকালুকি হাওরসংলগ্ন রাবার বাঁধ এলাকা পর্যন্ত চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আছে। ওই রাস্তা দিয়ে পূর্ব বেলাগাঁওয়ের লোকজন উপজেলা সদরে চলাচল করেন। গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। প্রতিবছর বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কণ্ঠিনালা নদী উপচে পাড়ের রাস্তাটি তলিয়ে গ্রামের বাড়িঘর প্লাবিত হয়। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে গ্রামের কয়েকজন যুবক রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে তাঁরা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সবাই এই উদ্যোগে সাড়া দেন। এরপর খননযন্ত্র ভাড়া করে এনে রাস্তায় মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়। খননযন্ত্রের ভাড়ার টাকা চাঁদা তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর নদী ও রাস্তার পার্শ্ববর্তী জমি থেকে মাটি কেটে আনা হচ্ছে।
সরেজমিনে আজ রোববার সকাল আটটার দিকে দেখা গেছে, গ্রামের শেষ প্রান্তের গণি মিয়ার বাড়ি থেকে জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবু তাহেরের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা দুই থেকে তিন ফুট করে উঁচু করা হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে গ্রামের দাড়ার পাড় থেকে পূর্বমুখী রাস্তায় কাজ শুরু হয়।
গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়ার (৫০) ভাষ্য, ‘বছরের ছয় থাকি আট মাস আমরা পানির মাঝো থাকি। এক বাড়ি থাকি অন্য বাড়ি নৌকায় যাওয়া লাগে। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরারে নৌকায় নিয়া কণ্ঠিনালার ব্রিজর ঘাটে নামাই দিতে হয়। কষ্টর সীমা থাকে না। এর লাগি নিজেরাই চাঁদা তুলি রাস্তা উঁচু করাইয়ার।’
কাজের উদ্যোক্তা সাইফুর রহমান (৪৫) বলেন, ‘মেম্বার থাকি এমপি (সাংসদ) পর্যন্ত সবার কাছে অনেক বার রাস্তাটা সংস্কারর দাবি জানানো হইছে। কেউ উদ্যোগ নেননি। তাই আমরাই উদ্যোগটা নিছি। গ্রামের ধনী-গরিব সবাই সাধ্যমতো চাঁদা দিছে। সপ্তাহ দিনের মধ্যে বাকি দুই কিলোমিটার রাস্তা হয়ে যাবে। আশা করছি, বন্যা হলে আর রাস্তাটা ডুবে যাবে না।’
সাইফুর রহমান বলেন, কণ্ঠিনালা নদী দীর্ঘদিন ধরে পলিতে ভরাট হয়ে পড়েছে। নদী থেকে মাটি কাটায় পুনঃখননের কাজটাও হয়ে যাচ্ছে।
জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কারের কথা তিনি জানেন। কাজ শুরুর আগে গ্রামবাসী তাঁর কাছে এসেছিলেন। এ কাজের জন্য তিনি তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইউপির চেয়ারম্যান বলেন, পূর্ব বেলাগাঁওয়ের রাস্তাটি নদীর পার দিয়ে গেছে। এ কারণে ভাঙনের আশঙ্কায় তাঁরা রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। তবে গ্রামের কবরস্থানের পাশ দিয়ে চলাচলের বিকল্প পুরোনো কাঁচা রাস্তা আছে। ওই রাস্তাটিরও বেহাল। রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল মতিন মুঠোফোনে বলেন, পূর্ব বেলাগাঁওয়ের রাস্তা সংস্কারে তাঁদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।